সদ্য সমাপ্ত কাতার সফরের সারসংক্ষেপ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

প্রায় ১৮ মিনিট তিনি কাতারের সফর নিয়ে কথা বলেন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের মধ্য থেকে ১০ জন বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

সাংবাদিকরা যেসব প্রশ্ন করেছেন

একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, গত ১৫ বছরে অর্থনীতি জীবনযাপনের মান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যে বাংলাদেশ যে ট্রান্সফরমেশন হয়েছে তার একটা তুলনামূলক চিত্র যদি আমাদের কাছে রেফারেন্স হিসেবে থাকে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে দিতে পারব। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছ থেকে একটা উন্নয়নে চিত্র যদি পেতে পারতাম।

সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম প্রশ্ন রেখে বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে। গত ১৪ বছরে আমরা স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করেছি। একটা গণতান্ত্রিক সরকার তৃতীয় ট্রাম শেষ করতে যাচ্ছে। একজন রাষ্ট্রপতি তার ২ মেয়াদের দায়িত্ব সুস্থভাবে পালন করে যাচ্ছেন। আর কী হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে? সেটার ব্যাপারে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কোনো ব্যাখ্যা আছে কি-না?

তিনি আরেকটি প্রশ্ন রেখে বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশন সুট দ্যা রিওয়াডেট নট পানিস। আপনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে জেনারেলসিটি দেখিয়েছেন। কিন্তু বিশ্ব বিবেক যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করছে, তাদের অর্থ কমে যাচ্ছে, সেই জায়গা আপনার জেনেরেলসিটি কী রিওয়াডেট না হয়ে পানিস্টের দিকে যাচ্ছে কিনা? 

তিনি আরও বলেন, আপনার যে উন্নয়ন, তা রোহিঙ্গাদের ধারণ করতে গিয়ে আমরা যে অর্থনীতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছি, সেই জায়গা মাত্র কয়দিন আগে আমরা দেখলাম, সৌদি আরব আর ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতা করলে চীন। আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভারত ও চীন। তাদের এ রকম মধ্যস্থতা করতে আমরা লক্ষ্য করব কিনা?

ইউএনবির উপদেষ্টা সম্পাদক সাংবাদিক ফরিদ হোসেন প্রশ্ন রেখে বলেন, ৪০ জন বিদেশি নাগরিকের একটি বিজ্ঞপ্তি বা একটি আপিল সেটা আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে পৌঁছেছে কিনা? সেটা আপনি দেখেছেন কিনা? এই বিজ্ঞপ্তির সম্পর্কে আপনার মন্তব্য আমি আশা করছি।

এটিএন নিউজের প্রভাস আমিন প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা জানি যে যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি টালমাটাল। ডলারের দাম, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। আপনার (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে আমরা মঙ্গা পেছনে ফেলে এসেছি। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের পুষ্টিতে একটু টান পড়েছে। মুরগির দাম বেড়ে গেছে, ডিমের দাম বেড়ে গেছে। সামনে রমজান। আপনার সরকার অনেক চেষ্টা করছে, কালকেও মুখ্যসচিব অনেক পদক্ষেপের কথা বলেছেন। তবুও আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই, যাতে সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হতে পারে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমরা স্বস্তিতে রমজান পার করতে পারব কিনা?

আমাদের অর্থনীতির সাংবাদিক মাকসুদা ভাট্টি প্রশ্ন রেখে বলেন, আগামীতে আমাদের অর্থনীতিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন? তিনি আরেকটি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা দেখেছি বিভিন্ন দেশে শ্যাডো সরকার রয়েছে। তারা বিভিন্ন দেশে গিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করে। কিন্তু আমাদের দেশে কেন স্যাডো সরকার হয় না?

সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যখন ৭ মার্চে দেশের বাইরে ছিলেন তখন আপনার পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এটি রাজনীতিতে বড় চমকের পূর্বাভাস কিনা? তিনি আরেক প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। যখন আমরা জানি কেউ না কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তখন নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেটার জন্য দলগতভাবে আপনার প্রস্তুতি কী?

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনার সঙ্গে কাতারের আমিরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে আপনি জ্বালানি সহযোগিতা চেয়েছিলেন। আমরা জানি, সামনে গ্রীষ্মকাল আসছে, বেশ গরম, বিদ্যুতের একটা বড় সংকট থাকবে। সেই দিনই কাতারের আমিরের প্রতিনিধিরা কী কী সহযোগিতা দরকার জানতে চেয়েছেন। সহযোগিতামূলক কী কী পাওয়া যেতে পারে? 

তিনি আরেকটি প্রশ্ন রেখে বলেন, ২০২৬ সালের পর যখন আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণ করে যাব তখন আমাদের কতগুলো সুবিধা পাব না। এগুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনার কী মন্তব্য? একটু জানতে চাই।

নিউজ টুয়েন্টিফোরে সাংবাদিক শাহ আলী জয় প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমে ভারতে উলফা নেতার সাক্ষাৎকার প্রকাশ পেয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, উলফার যে কার্যক্রম বাংলাদেশে তারা চালিয়েছে সেটি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে। বাংলাদেশে যে ১০ ট্রাক অস্ত্র এসেছিল, সেই অস্ত্র সরকারের মদদেই তারা বাংলাদেশে এনেছিলেন ভারতে পাচার করার জন্য। এই ঘটনাটি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা রাজনৈতিক বিষয় বলে এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন। বিএনপি যে এটাকে রাজনৈতিক বিষয় বলে দাবি করছেন, আপনি এই দাবিকে কতটুকু যৌক্তিক মনে করেন?

সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক দেবাশীষ রায় প্রশ্ন রেখেন বলেন, রাজনৈতিক মাঠে এখনো বলা হচ্ছে, আপনি আবারও সংলাপ করবেন। হয়তো রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বসবেন। অথবা আওয়ামী লীগ কীভাবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সেগুলো নিয়ে কোনো ধারণা দেশবাসীকে দেবেন কিনা?

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার রফিকুল ইসলাম রনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নির্বাচন সামনে আসলেই কূটনৈতিকদের দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়। কিছু দিন আগে আপনার পার্টির সেক্রেটারির কাছে এসেছিলেন কিছু কূটনীতিক এবং পরবর্তীতে কিছু কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রোববার বিএনপি বৈঠক করেছে। তারা বৈঠক করে জানিয়েছে, তারা আপনার অধীনে কোনো ভোটে যাবে না। আবার এক নোবেল বিজয়ী ৪০ বিদেশি নাগরিককে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সব কিছু মিলিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো চাপ অনুভূত করছেন বা কোনো চাপ আছেন কিনা?

এমএসআই/ওএফ