সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের মামলায় পরিচালক পারভেজ হোসেনকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়ায় দায়িত্বে থাকা এসআইয়ের কৈফিয়ত তলব করেছে শিল্প পুলিশ।

বুধবার (১৫ মার্চ) সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের পরিচালক পারভেজ হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়ার ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। একজন ব্যবসায়ীকে হাতকড়া লাগানোর পরও কোমরে দড়ি বাঁধার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসে শিল্প পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সুলাইমানেরও।

বুধবার রাতেই ওই ব্যবসায়ীকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে থাকা এসআই অরুন কান্তি বিশ্বাসের কাছ থেকে কৈফিয়ত তলব করা হয়। শিল্প পুলিশ চট্টগ্রাম ইউনিটের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি হয়েছে।

ওই আদেশে বলা হয়, অরুন কান্তি বিশ্বাস স্কটের ইনচার্জ ছিলেন। তিনি নিজের খেয়ালখুশি মতো একজন আসামিকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করেছেন। এতে জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এছাড়া এটি কর্তব্য কাজে অবহেলা, অদক্ষতা ও বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধের শামিল। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা ৭ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে একতরফা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া, দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত অপরাধী হিসেবে আচরণ না করা এবং আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া আটক বন্দিদের মানবাধিকার। যেকোনো বন্দির প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন, অপমানজনক আচরণ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বন্দি নাগরিকদের প্রতি সদাচরণ প্রদর্শন করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে।

এর আগে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের মামলার আসামি পারভেজকে নগরের জিইসি মোড় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল কেশবপুর এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেড বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে সাতজন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ মার্চ রাতে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা দায়ের হয়। বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো আব্দুল কাদের মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে আসামি করা সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের এমডি মো. মামুন উদ্দিন (৫৫), পরিচালক পারভেজ হোসেন (৪৮) ও আশরাফ উদ্দিন বাপ্পি (৪২), ম্যানেজার আব্দুল আলীম (৪৫), প্ল্যান্ট অপারেটর ইনচার্জ সামসুজ্জামান শিকদার (৬২), প্ল্যান্ট অপারেটর খুরশিদ আলম (৫০), সেলিম জাহান (৫৮), নির্বাহী পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, অ্যাডমিন অফিসার গোলাম কিবরিয়া, অফিসার শান্তনু রায়, সামিউল, সুপারভাইজার ইদ্রিস আলী, সানা উল্লাহ, সিরাজ উদ-দৌলা, রাকিবুল ও রাজীবকে।

মামলার এজাহারে বাদী রোকেয়া বেগম উল্লেখ করেন, কারখানা মালিক ও আসামি হওয়া কর্মকর্তারা যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তারা বিপজ্জনকভাবে গ্যাস উৎপাদন, ভর্তি ও সরবরাহ করতেন। তারা তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনা মোকাবিলার মতো প্রশিক্ষিত জনবল রাখেননি। এতে করে বিস্ফোরণে তার স্বামীসহ সাতজন মারা যান। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক), ৩৩৭, ৩৩৮ ও ৪২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

এমআর/ওএফ