আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে গাড়ি আগমনের হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়েছে। প্রাথমিক রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাইয়ে প্রায় ১১ হাজার গাড়ির এন্ট্রির হিসাবে গোঁজামিল পাওয়া গেছে। যার মাধ্যমে এন্ট্রি ফি ও ভ্যাট বাবদ সাড়ে ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ২৩ লাখ টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে নয়ছয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এমন অনিয়মের সঙ্গে ট্রাফিক পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল কাদের জিলানী এবং ওয়্যারহাউজ সুপার আবু মুসা মো. তারেক নামের তিন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রায় দুই বছরের অনুসন্ধান শেষে সম্প্রতি দুদকের সহকারী পরিচালক আলতাফ হোসেন কমিশনে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেন। যেখানে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধানটি দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন : এসকে সিনহার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজে যুক্তরাষ্ট্রে চিঠি দেবে দুদক

এ বিষয়ে দুদক কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দুদকের অপর এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে যতটুকু রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা গেছে, সেখানে গাড়ি এন্ট্রির হিসাবে গরমিল রয়েছে। অনেক হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কাছে কয়েক দফায় চিঠি দেওয়া হলেও নথিপত্র পাওয়া যায়নি। ওই হিসাবসহ আরও কিছু নথিপত্র পাওয়া গেলে বড় অংকের রাজস্ব আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যাবে।

সম্প্রতি অনুসন্ধান কর্মকর্তা পিআরএলে যাওয়ায় বাকি অনুসন্ধান কাজ রংপুরের দুদক অফিস থেকে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আখাউড়া স্থলবন্দরের রেজিস্টারে মোট ১১ হাজার ৯৯৫টি গাড়ি এন্ট্রি দেওয়া আছে। কিন্তু কাস্টমস শুল্ক স্টেশনের হিসাব অনুসারে ২৬ মাসে মোট ২২ হাজার ৯১৪টি গাড়ি বন্দরে আগমন করে। অর্থাৎ কাস্টমসের হিসাবের চেয়ে স্থলবন্দরের রেজিস্টারে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২৬ মাসে ১০ হাজার ৯০৭টি গাড়ি কম এন্ট্রি দেওয়া আছে।

নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কাস্টমসে এন্ট্রিকৃত গাড়ির তুলনায় স্থল বন্দরে ১০ হাজার ৯০৭টি গাড়ি কম এন্ট্রি করে এন্ট্রি ফি ও ভ্যাট বাবদ সরকারি ১২ লাখ ৬২ হাজার ৯০৩ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ওই সময়ে বন্দরে প্রবেশকৃত গাড়ি এন্ট্রির দায়িত্বে ছিলেন ট্রাফিক পরিদর্শক আব্দুল কাদের জিলানী।

আরও পড়ুন : সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডির বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন

অন্যদিকে, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে বন্দরের আয় ২৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬১৩ টাকা কর্তৃপক্ষের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়নি। তবে আত্মসাতের ঘটনা উদঘাটিত হওয়ার পর ৭ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ওই টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। আদায় করা রাজস্ব ব্যাংক খোলা না থাকলে পরের দিন ব্যাংকে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, এই টাকা ট্রাফিক পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল কাদের জিলানী এবং ওয়্যার হাউজ সুপার ব্যক্তিগতভাবে খরচ করেছেন। তথ্য ফাঁস হওয়ার অনেকদিন পর তারা ওই টাকা ব্যাংকে জমা দেন।

এ অবস্থায় জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া গাড়ি এন্ট্রি ও বন্দরে গাড়ি অবস্থানের সময় কম দেখিয়ে সরকারি ১২ লাখ ৬২ হাজার ৯০৩ টাকা আত্মসাৎ ও ২৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬১৩ টাকা আদায় করা হলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। একই সঙ্গে ট্রাফিক পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল কাদের জিলানী এবং ওয়্যার হাউজ সুপার আবু মুসা মো. তারেকের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আরএম/এসএসএইচ/