রমজান মাসে খোলা অবস্থায় খাবার বিক্রি না করার জন্য হোটেল মালিকদের অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, রমজান উপলক্ষ্যে হোটেলগুলোতে যেন পচা বাসি খাবার বিক্রি করা না হয়। ইফতারির খাবারে যেন ফুড গ্রেড রঙের জায়গায় শিল্পকারখানার রঙ যেন না মিশে তা হোটেল ব্যবসায়ীদের খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতিকে আমি বলব, তারা যেন চকবাজারের দিকে নজর দেন। এবার কোনোভাবেই যেন চকবাজারে খোলা ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ইফতারের খাবার বিক্রি না করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী ও চকবাজারের ইফতার সামগ্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ভোক্তার অধিকারের ডিজির অনুরোধের প্রেক্ষিতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, রোজার মাসে চকবাজারে যেসব ব্যবসায়ীরা ইফতারের খাবার বিক্রি করেন তাদের অধিকাংশই ভাসমান। তারা আমাদের কথা শুনবেও না এবং তারা আমাদের কন্ট্রোলেও নেই। তাদের যদি আমরা বলি, আপনারা খোলা অবস্থায় ইফতারের সামগ্রী বিক্রি করবেন না তাহলে তারা উল্টো আমাদের দিকে তেড়ে আসবেন। এটা সম্ভব নয়।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতির বক্তব্যের উত্তরে ভোক্তা অধিকারের ডিজি বলেন, আপনারা ব্যবসা করবেন ভালো কথা, লাভ করেন তাতেও সমস্যা নেই। কিন্তু মানুষের প্রতি অবিচার করবেন না। খোলা অবস্থায় রোজায় পচা বাসি খাবার বিক্রি করবেন না। এছাড়া খাবারে ফুড গ্রেড রঙের কথা বলে শিল্পকারখানার রঙ ব্যবহার করবেন না।

আমরা একদিকে স্বপ্ন দেখছি অর্থনীতি ১ ট্রিলিয়ন ডলারে যাবে। বিজনেস সামিট করছি চকচকে করে। সিএনএন-এর মতো বৈশ্বিক গণমাধ্যম এসে এ প্রোগ্রাম কাভার করছে এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিচ্ছেন। এ অবস্থায় তারা যদি দেখে, চকবাজারে কুকুর দৌড়াচ্ছে, মাছি পড়ছে আর সেই খাবার আপনারা বিক্রি করছেন তাহলে কেমন দেখায়? এ ছবি তো আর ধরে রাখতে পারবেন না, তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, হঠাৎ করে তো আর এ অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে না। তবে আমাদের সবার একসঙ্গে কাজ করে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের ব্যবসায়ী ও সমাজকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।

পরে সভায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের হোটেল ব্যবসায়ীদের আরও সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে কোনো ক্রেতা যদি কোনো কারণে একটি হোটেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহলে কিন্তু আর এ হোটেল টিকতে পারবে না। পৃথিবীর অন্যতম ধুলাবালির শহর ঢাকা। এ শহরে যদি আমরা রাস্তায় খাবার রেখে কিছু দিয়ে ঢেকে না রাখি তাহলে কীভাবে হবে? এসব বিষয়গুলো গণমাধ্যমের মাধ্যমে মানুষের চোখে পড়ে। কয়দিন আগে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহার নিয়ে একটা কথা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ কিন্তু আর আগের বাংলাদেশ নেই। মিডিয়ার মাধ্যমে এসব খবর সারা বিশ্ব পৌঁছে যায়। বিদেশ থেকে মানুষজন আর দেশে আসতে চায় না, আমাদের আত্মীয়স্বজন দেশে আসতে চায় না।

তিনি বলেন, গতকাল একজন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন সাত হাজার মরা মুরগি বাংলাদেশের হোটেলগুলোতে খাওয়ানো হয়। গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে যদি একজন প্রতিমন্ত্রী এ ধরণের কথা বলেন, তাহলে তো ব্যবসায়ীদের ঠাডা পরে মরে যাওয়ার অবস্থা। যে অপরাধ করবেন তিনি অপরাধী। একটা মরা মুরগি বিক্রি হলে আপনারা ওই হোটেল মালিককে গুলি করে মেরে ফেলেন আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা যারা এ ধরণের অপকর্ম করি না তাদের যদি অভিভাবক পর্যায় থেকে বলা হয় সাত হাজার মরা মুরগি খাওয়ানো হচ্ছে, এটা কেমন কথা? এ জায়গাটা থেকে সরে আসতে হবে।

এমএসি/এফকে