জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা শেষে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে

ঢাকা সফররত শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ‘এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা’ বলে নিজ টুইটার অ্যাকাউন্টে উল্লেখ করেন তিনি।

সভার স্মৃতিসৌধের কিছু ছবি প্রকাশ করে টুইটারে তিনি লেখেন, ‘যারা স্বাধীনতার জন্য, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মুক্ত, স্বাধীন আর গর্বিত বাংলাদেশের জন্য, পুরো বাঙালি জাতীর ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের স্মৃতিসৌধে এসে শ্রদ্ধা জানানো এক অনন্য অভিজ্ঞতা।’

শুক্রবার (১৯ মার্চ) বেলা ১১টায় তিনি সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন এবং একটি পারিজাত ফুল গাছের চারা রোপণ করেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী।

অপর এক টুইট বার্তায় রাজাপাকসে বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চাই, যাতে দুই দেশই পারস্পরিকভাবে লাভবান হতে পারে।

এর আগে সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। তিনি একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। 

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকায় স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে রাজাপাকসেকে ২১টি গান স্যালুটসহ আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনারের মাধ্যমে সম্মাননা জানায় সামরিক বাহিনীর একটি চৌকস দল। সেখান থেকে সরাসরি স্মৃতিসৌধে যান শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহম্মেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান সেখানে তাকে স্বাগত জানান। পরে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজাপাকসে

রাজাপাকসের সঙ্গে দেশটির শিক্ষামন্ত্রী, আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী, তাঁত ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী, গ্রামীণ গৃহায়ণ ও গৃহ নির্মাণ সামগ্রী শিল্প প্রতিমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ২৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে।

বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও থাকবেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা শেষে সেখানে গাছের চারা রোপণ করেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে দেশটির সঙ্গে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। সফরের প্রথম দিন বিকেলে রাজাপাকসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশেষ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয়োজনে নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।

রাজাপাকসে শনিবার (২০ মার্চ) বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। ওইদিন বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে সন্ধ্যায় কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন মাহিন্দা রাজাপাকসে।

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সোনালি দিগন্তের সূচনা

এর আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অংশ নিতে দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মেদ সোলিহ। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে যৌথ কমিশন গঠন (জেসিসি), পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে সহায়তা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়।

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মেদ সোলিহর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  

এছাড়া দুই শীর্ষ নেতার আলোচনায় উঠে এসেছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, শুল্ক সহযোগিতা ও দ্বৈত কর পরিহার, বিনিয়োগ, অভিবাসী ইস্যু, মানবসম্পদ ও যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ঔষধ সামগ্রী, কৃষি, পর্যটন, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সমস্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও প্রশমন। আর এসব বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণেও একমত হয়েছেন দুই শীর্ষ নেতা।

বাংলাদেশের জোড়া উদযাপনে অংশ নিতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে ফার্স্ট লেডি ফাজনা আহমেদ ছাড়াও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্ৰী আব্দুল্লাহ শহিদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্ৰীসহ মোট ২৭ জন অতিথি ঢাকায় আসেন।

এমএআর/