দুইজন যাত্রীকে নামিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ষাটোর্ধ জামাল মিয়া বলছিলেন, যেমন ভ্যাপসা গরম, তার ওপর আছি রোজা। কাহিল দশা! কিন্তু রোজাও ছাড়া যাচ্ছে না, রিকশার প্যাডেলও ছাড়া যাচ্ছে না।

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় কথা হয় বগুড়া ধুনট থেকে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় আসা রিকশাচালক জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। ৩০ বছর ধরে রিকশা চালান তিনি। এবারই প্রথম যেন সব একসঙ্গে দেখছেন- নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম, ভ্যাপসা গরম সঙ্গে রমজান।

তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চাইলেও একদিন বসে খাওয়ার চিন্তা করা যায় না। কাজ না করলে খাব কী? আবার গরমে রোজা রেখে রিকশা চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে গেছে।

শুধু জামাল উদ্দিন নয় এবারের পবিত্র রমজানে প্রচণ্ড কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া, হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষদের। এরমধ্যে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। তারমধ্যে শ্রম ছাড়া দিন কাটিয়ে খাবারের শঙ্কা জেঁকে বসেছে যেন।

এদিকে শেওড়াপাড়া থেকে ভ্যান বোঝাই রড নিয়ে মিরপুর-১০ যাচ্ছিলেন দীন মোহাম্মদ (৫৬) নামের এক ভ্যানচালক। ফাঁকে কাজীপাড়ায় দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন কিছুক্ষণ। এসময় কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজানের এ এক সপ্তাহে প্রচণ্ড রোদের কারণে শ্রমজীবী মানুষদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ রোজা রাখতে পারছি না। রোজা রেখে এমন শ্রম দেওয়া সম্ভব নয়। কাজ না করে বসে থেকে রোজা রাখাও সম্ভব নয়। খেতে তো হবে!

মিরপুর ৬০ ফিট পাকা মসজিদ এলাকায় নির্মাণাধীন অনেক ভবনে কাজ চলছে। এরই এক ভবনে কাজে ব্যস্ত রয়েছেন অনেক শ্রমিক। তাদেরই একজন সুজন মিয়া।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এ শ্রমজীবী বলেন, আর কয়টা দিন গেলেই ঈদ। ঈদ উপলক্ষে এখানে কাজ বন্ধ থাকবে। তখন বাড়ি যাব। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করব। ছোট বোন, মা আর বাবার জন্য কেনাকাটা করতে হবে। এ কথা ভেবে একটি দিনও বসে কাটানোর কোনো সুযোগ নেই। রোজা থেকেই কাজ করছি। রোজা থেকে কাজের ধকল সয়ে সয়ে বিকেলে যেন শরীর আর চলে না। ইফতারের পর বিছানায় কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, কারণ তখন শরীর অনেক খারাপ লাগে। কিন্তু উপায় নেই। কাজ শুরু হলে শেষ অবধি চলতেই থাকে, শ্রম দেওয়া ছাড়া পেটে তো আর খাবার জুটবে না।

বংশালের উদ্দেশে মালবোঝাই ভ্যান নিয়ে যাওয়ার সময় বঙ্গবাজারে দেখা মেলে ভ্যানচালক আকবর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনে মালিকের কাজ করি, রাতে ঘুরেফিরে নিজের মতো কাজ করি। কাজ না করলে খাবো কী! দিনের কাজ শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত ছুটি নেই। এর মধ্যে পড়েছে প্রচণ্ড গরম। না পেরে আজ রোজা ভেঙে ফেলেছি। এ কারণে খারাপও লাগছে খুব। 

এদিকে বিভিন্ন হোটেলে ভ্যানে করে কাঠের লাকড়ি সরবরাহ করেন জহিরুল। তিনি বলেন, রোদে পুড়ে কাজ করে হোটেলগুলোতে বিকেলের আগেই লাকড়ি পৌঁছে দিতে হয়। কাজে একদিনও গ্যাপ দেওয়া যায় না। দিলে কাজেও লস সঙ্গে টাকাও। তাই সব সয়ে ফেরি করছি নিজের রিজিক।

জেইউ/এফকে