চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে নগর বিশেষ শাখার (সিটি এসবি) সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সন্তু শীলকে ক্লোজড করা হয়েছে। অভিযুক্ত সন্তু প্রায় চার বছর ধরে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বডিগার্ড হিসেবে কর্মরত। 

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) এক আদেশে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই দিন পৃথক আরেকটি আদেশে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দিনকে। 

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন সিএমপি উপ-কমিশনার (সদর) আবদুল ওয়ারীশ। তিনি বলেন, কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের নির্দেশনায় দুটি আদেশ আজকে (মঙ্গলবার) জারি হয়েছে। আপাতত তার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ২০ এপ্রিল দুপুরে দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা এলাকায় শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল নিজ সংসদীয় আসনে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করতে গেলে ওসি জাহিদুল কবিরকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এএসআই সন্তুর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিজ থানায় জিডি করেন কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির। পাশাপাশি তিনি সিএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ২১ এপ্রিল ‘ওসিকে শিক্ষা উপমন্ত্রীর বডি গার্ডের ধাক্কা, থানায় জিডি’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে ঘটনার দিন প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার লালদিঘী মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাফর আহমেদের জানাজায় উপস্থিত হন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। এ সময় কোতোয়ালি থানার ওসি তাকে রিসিভ করেন। জানাজা শেষে উপমন্ত্রী থানার পাথরঘাটা নজু মিয়া লেনে ঈদসামগ্রী বিতরণ করতে যান। সেখানে যাওয়ার পথে উপমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা বডিগার্ড সন্তু ওসি জাহিদুল কবিরের একটু সামনে গিয়ে পেছন থেকে সজোরে হাতের কনুই দিয়ে ধাক্কা দেন। এতে ওসি ডান হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এরপর ওসি তৎক্ষণাৎ বিষয়টি নিয়ে উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে উপমন্ত্রী ওসিকে ডেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিতে বলেন এবং বিষয়টি নিয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা উপমন্ত্রীর বডিগার্ড হিসেবে কোতোয়ালি থানার ওসিকে নানা বিষয়ে তদবির করতেন সন্তু। তবে কয়েকমাস আগে ওসি তাকে কোনো বিষয়ে তদবির করতে বারণ করেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন এএসআই সন্তু। কয়েকদিন ধরেই তিনি ওসিকে উচিতশিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এ নিয়ে দলভারী করতে রাজনৈতিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধির সঙ্গে একাধিকবার কানাঘুষাও করেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্তু শীলের বিরুদ্ধে এর আগে কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি নেজাম উদ্দিন, পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার, বন্দর থানার সাবেক ওসি জাহিদুল কবিরের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওসি নেজাম উদ্দিন তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে একবার জিডি করেছিলেন। 

ভুক্তভোগী কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অধস্তন কর্মকর্তা হলেও সন্তু বেশ প্রভাবশালী। এজন্য তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস করেননি। অনেকটা নীরবে সহ্য করেছেন তার অত্যাচার। তবে সবশেষ বৃহস্পতিবার ওসি জাহিদুল কবিরের সঙ্গে পুনরায় একই ঘটনা হলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সন্তুর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। না হয় রাষ্ট্রের শৃঙ্খলিত এই বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে এবং বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

এমআর/এসএম