বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার শীর্ষ বৈঠক থেকে দুই দেশের সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঘোষণাকে একটি মাইলফলক বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। 

পাশাপাশি টোকিওর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে যে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, সেটি আগে কখনও হয়নি বলেও জানান মন্ত্রী।

বুধবার জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক শেষে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসে করা সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ড. মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ আমরা নীতিগতভাবে গ্রহণ করেছি। উভয় প্রধানমন্ত্রী সেটার ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-জাপানের সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়েছে। যা আগামী ৫০ বছরে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের রুপরেখা হিসিবে বিবেচিত হবে। এটা একটা মাইলফলক।

দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক নৈশভোজসহ প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপী সময় ধরে চলার কথা জানান মোমেন। বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে ইকোনোমিক পার্টনারশিপ চুক্তি, বিগ-বি প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদারকরণ, অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, জাপান ওভারসিস কপারেশন ভলেনটিয়ার প্রকল্প পুনরায় চালুকরণ, বাণিজ্য, বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগ, মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক, ঢাকা-টোকিও সরাসরি বিমান চলাচল-এসব বিষয়ে আলোচনা হয় এবং অগ্রগতি হয়।

বৈঠকে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে দুই সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষ এক চুক্তি ও সাত সমঝোতা স্মারক সই করে। মোমেন বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মোট ৮ চুক্তি ও সহযোগিতা স্মারক সই হয়েছে। 

এগুলো হলো- মেমোরান্ডাম অব ডিফেন্স কো-অপারেশন, এগ্রিমেন্ট অন মিউচুয়াল এসিস্ট্যান্স ইন কাস্টমস ম্যাটার, মেমোরান্ডাম অব কোঅপারেশন অন ইন্ডাস্ট্রিয়াল আপগ্রেডিং পার্টনারশিপ, মেমোরান্ডাম অব কোঅপারেশন অন শিপ রিসাইক্লিং, মেমোরান্ডাম অব কো-অপারেশন অন পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক, মেমোরান্ডাম অব কোঅপারেশন অন আইসিটি এবং সাইবার সিকিউরিটি, মেমোরান্ডাম অব কো-অপারেশন অন মেট্রোরেল এবং কৃষিখাতে সহযোগিতাবিষয়ক মেমোরান্ডাম। 

আরও পড়ুন : জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী

বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ৩০ বিলিয়ন ডলার ইয়েন সহায়তা ঘোষণা দিয়েছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,  জাপানিরা প্রধানমন্ত্রীকে যে সম্মান দিয়েছেন এ ধরনের সম্মান তারা আগে দেয়নি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দিয়ে নিজ কার্যালয়ে অভ্যর্থনা দেন। এছাড়া জাপান সরকার বাজেট সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশকে ৩০ বিলিয়ন ইয়েন সহায়তা দেবেন। 
দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপানের সহযোগিতা চেয়েছেন বলেও জানান ড. মোমেন।

প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফর খুব ফলপ্রসূ জানিয়ে মোমেন বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে সম্পর্ক খুব মধুর। এবারে আরও সলিডিফাই উভয়পক্ষই আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। 

তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আগামীর রুপরেখা প্রণয়নকল্পে বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পাশাপাশি কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সুনীল অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য-প্রযুক্তি, মানব সম্পদ উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, কর্মসংস্থান ও জনযোগাযোগ নতুন ভাবে সহযোগিতা স্থাপনের মধ্য দিয়ে দু’দেশ লাভবান হবে বলে আশা করা যায়। 

সরকারপ্রধান জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানালে কিশিদা সেটি গ্রহণ করেছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।  

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপে কমন ইস্যুগুলোতে যেমন- জলবায়ু পরিবর্তন হোক, এমপ্লয়মেন্ট হোক, গ্লোবাল কোনো ক্রাইসিস হোক; সে সমস্ত জায়গায় আরও ভালো মতো কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা জাপান থেকে ওডিএ সহযোগিতা পাই খুবই কনসেশনাল রেটে, সেগুলো পরবর্তীতে আরও ইফেক্টিভ রেটে আমরা পাব। এ ধরনের সার্বিক সহযোগিতা সামনের দিনে আরও বাড়বে।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী কয়দিন আগে ইন্দো-প্যাসিফিক ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশও ইতোমধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিকের আউটলুক ঘোষণা করেছে। তারা (জাপান) এ দুটোর মধ্যে অনেক মিলও খুঁজে পেয়েছে। কানেক্টিভিটির ব্যাপারে তাদের যথেষ্ঠ আগ্রহ রয়েছে। আমাদের আগ্রহ এবং তাদের আগ্রহের মধ্যে মিল দেখতে পাচ্ছি। এখানে (ইন্দো-প্যাসিফিকে) অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

এনআই/এনএফ