গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল আজ (বৃহস্পতিবার)। শেষ দিনে রিটার্নিং কর্মকর্তার তথ্যানুযায়ী, মেয়র পদে দল থেকে বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীরসহ মোট ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার একদম শেষ সময়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এক বিশেষ পরিপত্র জারির পর মেয়র জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা-২ শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে সতর্ক থেকে মনোনয়নপত্র বাছাই করতে ইসির বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। 

বিশেষ পরিপত্রে ইসি জানায়, সিটি কর্পোরেশন একটি সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বিধায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদটি রিট পিটিশন ৯১২৪/২০০৮ এ মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক লাভজনক পদ সাব্যস্ত করা হয়েছে। কাজেই স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৯ এর উপধারা (২)(ঙ) অনুযায়ী, মেয়র পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে উক্ত ব্যক্তি নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক হলে তাকে উক্ত পদ হতে পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হবে। কাউন্সিলর পদধারীরা লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত নন বিধায় তাদেরকে পদত্যাগ না করে নির্বাচনে প্রার্থী হতে আইনগত কোনো বাধা থাকবে না।

এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. আব্দুল হান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘উনি পদত্যাগ করেছেন কিনা সেটা আমার জানা নেই। উনার পদত্যাগের কোনো চিঠি আমরা পাইনি। এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলতে পারবে।’

মেয়র জাহাঙ্গীর পদত্যাগ করেছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। আগামী রোববার নাগাদ জানা যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে সর্বশেষ মন্তব্য হলো, আমি উনার পদত্যাগের বিষয়ে জানি না।’  

বিশেষ পরিপত্রে ইসি জানায়, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৯ ধারায় মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। আইনে ৯ এর উপধারা (২)(ঘ) ও (২)(ঙ) এর বিধান হচ্ছে- কোনো ব্যক্তি মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য এবং মেয়র বা কাউন্সিলর পদে থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি- (ঘ) কোনো ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে; (ঙ) প্রজাতন্ত্রের বা সিটি কর্পোরেশনের বা কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের বা অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থাকেন।

বিশেষ নির্দেশনায় আরও বলা হয়, কোনো প্রার্থী ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন ২ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে ও উক্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল হলে এবং আপিল আদালত নিম্ন আদালতের রায় বা সাজা স্থগিত না করলে অযোগ্য বলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত আপিল গ্রহণ করলেও তিনি অযোগ্য হবেন বা সংশ্লিষ্ট প্রার্থী জামিন পেলেও অযোগ্য হবেন অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সাজা স্থগিত বা মওকুফ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অযোগ্য হবেন।

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ এপ্রিল, মনোনয়ন বাছাই ৩০ এপ্রিল, রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ২ থেকে ৪ মে, আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আপিল নিষ্পত্তি ৫ থেকে ৭ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারে শেষ সময় ৮ মে ও প্রতীক বরাদ্দ ৯ মে।

খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের শেষ সময় ২১ মে। আপিল কর্তৃপক্ষের আপিল নিষ্পত্তির শেষ সময় ২৪ মে। প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে ও ভোট ১২ জুন।

আর রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে, বাছাই ২৫ মে। আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল দায়েরের শেষ সময় ২৮ মে। আর আপিল কর্তৃপক্ষের আপিল নিষ্পত্তির শেষ সময় ৩১ মে। প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন ও ভোট ২১ জুন।

এসআর/ওএফ