পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে বেশিরভাগ মানুষ ঢাকা ছাড়লেও কেউ কেউ ঈদ কাটিয়েছেন রাস্তাতেই। তাদের জীবনে ঘরে ফেরার তাড়া কিংবা প্রিয়জন কিছুই নেই। ঈদে এসব অসহায় মানুষদের আক্ষেপ আর প্রত্যাশা ছিল এক বেলা ভালো খাবার। 

ঈদের আগে শহরের হোটেল আর সাধারণ মানুষের সাহায্য নিয়ে খাবার পেলেও ঈদ পরবর্তী ফাঁকা এই ঢাকা শহরে এরা যেন আরো বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে উঠেছে। যাপিত জীবনের কোনো আক্ষেপ বা না পাওয়ার বেদনা তাদের এখন আর বিষিয়ে তোলে না। ঈদপরবর্তী ঢাকাতে এমন অসহায় ছিন্নমূল অনেকের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সামছুল আলম সাদ্দাম। নিজের সীমাবদ্ধ সামর্থ্য দিয়ে প্রতিদিন কিছু কিছু মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন এক প্যাকেট খাবার। রাজধানীর খিলগাঁও, মালিবাগ এবং মৌচাকের আশপাশের এলাকাগুলোতে ঘুরে প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশ থেকে একশ জন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন তিনি।  

মালিবাগে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ফরিদা বানুকে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন সামছুল আলম সাদ্দাম। এ সময় ফরিদা বলেন, ‘বাবা ঢাকা শহরে এহন মানুষ নাই। ঈদ আইলে সকলের আনন্দ থাকলেও আমাগো কষ্ট বাড়ে। কেউ যে ভিক্ষা দিব তাও পাই না। দোকানগুলাও বন্ধ। কষ্ট হয় কিন্তু কিছুই করার নাই। ছাওয়াল-পাওয়ালেও ভাত দেয় না আমারে। আমার ঘর-বাড়ি নাই; রাস্তায় খাই, রাস্তাতেই থাহি। বাজান (সামছুল আলম সাদ্দাম) প্রায় আসে আমার কাছে। খোঁজ নিয়ে খাবার দেয়। আল্লাহ বাজানরে বাঁচায় রাখুক।’

ইয়াসিন নামের এক পথশিশু বলেন, ‘সাদ্দাম ভাইরে আমি চিনি। উনি প্রায় আসে। আমাগো খাবার দেয়। আইসক্রিম কিনে দেয়। ঈদে একটা নতুন জামাও কিনে দিছে।’

ফজলু মিয়া নামে একজন বলেন, ‘অনেক বড়লোক আছে কেউ খোঁজখবর নেয় না। কেমনে বাইচ্চা আছি সেটা আমি জানি। মাঝে মাঝে বাবাজি আসে। খাবার দিয়ে যায়। খোঁজখবর নেয়।’

এ বিষয়ে সামছুল আলম সাদ্দামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া এসব মানুষকে নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। এদের মুখে হাসি ফোটাতে না পারলে আমাদের এই আকাশচুম্বী উন্নয়নও মলিন হয়ে পড়বে। ঈদে অনেকের বাড়ি চলে যাওয়ায় আসলে তারা কিছুটা বিপাকে পড়েছে। শহরের রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ। রাস্তায়ও তেমন একটা মানুষ নাই। সবকিছু মিলিয়ে তারা কিছুটা সমস্যাতেই আছে।

তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করেছি আমার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে। আমার এ প্রচেষ্টায় আহামরি কোনো পরিবর্তন না হলেও সমাজের অন্তত পঞ্চাশ জন মানুষ হাসুক। একবেলা পেটভরে খাবার পাক। কোনো সমাজই অসচ্ছলদের পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে।  

এমএম/এমএ