জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বারিশ চৌধুরী বলেছেন, বাবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্যোগগুলো তখন সফল হবে, যখন মানুষজন বিদেশে না গিয়ে দেশেই চিকিৎসা সেবা নেবে। তিনি বলতেন, যে দেশের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীরা চেকআপের জন্য বিদেশে যায়, সে দেশের স্বাস্থ্যখাতে কোনোদিন উন্নতি হবে না।

বারিশ বলেন, বড় হওয়ার পর বাবা আমাকে দেশের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রাম ও চর অঞ্চলে নিয়ে যেতেন। যেখানে দুই-একদিনের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প করা হত। সাধারণত কারো বাড়িতেই করা হত প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র ও রান্নাঘরকে বানানো হত অপারেশন থিয়েটার। চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত থাকা এ মানুষগুলোকে সেবা করতে পেরে বাবা খুব খুশি হতেন।

রোববার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে স্বাস্থ্য আন্দোলন কর্তৃক আয়োজিত ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

মূল বক্তব্যে কবি ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেন, ডাক্তাররা যখন গ্রাম বিমুখ তখন তাদের গ্রামমুখী করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ও জাতীয় ওষুধনীতিসহ জনগণের দোর গোরায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে তিনি কাজ করে গেছেন আজীবন। সোচ্চার ছিলেন যেকোনো ক্ষমতাসীন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। মূলত জনগণের মধ্যে থেকে জনগণের স্বাস্থ্যসমস্যার সমাধান করার জন্য কাজ করে গেছেন তিনি।

তিনি বলেন, জাফর ভাই নানাভাবে আমাদের অনুপ্রাণিত করতে থাকবেন, এ ব্যাপারে সন্দেহ কোনো নেই। তবে তার সঙ্গে সপ্রাণ সম্পর্ক জারি রাখার সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে তার কাজের তাৎপর্য নিষ্ঠার সঙ্গে অনুধাবন করার চেষ্টা করা। বিশেষত তার কাজের সার্বজনীন দিকগুলোকে সমসাময়িকতার বাইরে দূরদর্শী ভবিষ্যতের জায়গা থেকে বোঝা খুবই জরুরি। বিশেষত স্বাস্থ্য আন্দোলনের গতিমুখ ও প্রধান কাজের ক্ষেত্র নির্ণয়ের জায়গাগুলো স্পষ্ট করে তোলা দরকার।

স্বাস্থ্য সেবায় তার অবদানের কথা উল্লেখ করে এ কবি ও চিন্তাবিদ বলেন, স্বাস্থ্য আন্দোলনে কোন ক্ষেত্রগুলোর ওপর আমরা বিশেষভাবে জোর দেব সে বিষয়ে গুছিয়ে ভাবতে পারার সামর্থ্য অর্জন করাটাই তাকে সম্মানিত করার সঠিক পথ। তার সাধারণ কাজের নীতি ছিল জনগণের সঙ্গে থাকা, তাদের বাস্তব সমস্যাকে নিজের সমস্যা হিসেবে বোঝার চেষ্টা করা এবং কোনো গণবিচ্ছিন্ন ‘এক্সপার্ট’ দিয়ে নয়, জনগণকে নিয়েই তার সমাধান বের করা। 

ফরহাদ মজহার বলেন, বিশেষজ্ঞতার দরকার আছে, কিন্তু গণবিচ্ছিন্ন বিশেষজ্ঞতা জ্ঞান এবং জ্ঞানের সামাজিক উপযোগিতার মধ্যে যে বিশাল ব্যবধান তৈরি করে তাকে কাটিয়ে ওঠা খুবই কঠিন। তিনি ওষুধনীতির ক্ষেত্রে সফল হয়েছিলেন। কিন্তু ডাক্তার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বড় একটা অংশ তার বিরোধিতা করেছিল। বাংলাদেশে তার উদ্যোগে তৈরি স্বাস্থ্যনীতি ব্যর্থ হবার কারণ মূলত বিশেষজ্ঞদেরই বিরোধিতা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি (১৯৯০) ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতার মুখে পঙ্গু হয়ে গেছে। তাই গণমানুষের সঙ্গে থাকা এবং জনগণকে নিয়েই জনগণের সমস্যা সমাধানের নীতি পপুলিজম নয়। জনগণের মধ্যে থেকে জনগণের বাস্তব সমস্যার সমাধানের কথা বলা সহজ, কিন্তু তাৎপর্যের দিক থেকে ভীষণ ভারি। এ অতি সাধারণ অথচ বিপ্লবী মর্মসম্পন্ন চিন্তাই জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাজীবন চর্চা করে গেছেন। 

ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ড. কাজী কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি ড. রশিদ-ই-মাহবুব, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. লেনিন চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড এম মুশতাক হোসেন, নারী স্বাস্থ্য প্রকল্পের পরিচালক সামিয়া আফরীন প্রমুখ।

ওএফএ/এফকে