চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষী ও তার বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেনকে জেরা করেছে প্রধান আসামি ও সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা। সোমবার (৮ মে) তৃতীয় চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে তাকে জেরা করা হয়। এর আগে একই আদালতে গত ৯ এপ্রিল ও ২ মে দুই দফায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। এরপর ২ মে তাকে জেরা করা শুরু করেন বাবুলের আইনজীবীরা।

জেরার বিষয়ে বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মওলা মুরাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলার এজাহার থেকে শুরু করে সার্বিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। উনি এজাহার কখন লিখেছেন? ওনার কাছে কখন কে এজাহার চেয়েছিলেন? চট্টগ্রামে কখন এসেছেন? চট্টগ্রামে এসে কোথায় ছিলেন? কোন কোন হোটেলে ছিলেন এবং কয়দিন ছিলেন? যদিও উনি এসবের উত্তর দিতে পারেননি। উনি একবার বলেছেন চট্টগ্রামে ওনার আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। তবে কোন আত্মীয় সেটা বলতে পারেননি। জেরা শেষে আমরা মোটামুটি বুঝতে পেরেছি উনি কোথাও ছিলেন না, চট্টগ্রাম পিবিআই অফিসে ছিলেন। সেখানে পিবিআই এজাহার লিখে দিয়েছে। উনি সাক্ষ্য দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা দিন মোশাররফ হোসেনকে জেরা করা হয়েছে। মূলত বাবুল আক্তারের শ্বশুর যে মামলা করেছে সেটার বিষয়ে জেরা করা হয়েছে। ওনি এজাহার কোথায় লিখেছেন? উনার ইচ্ছামতো এজাহার করেননি, পিবিআই রেডি করেছেন এবং ওনি সাইন করেছেন– এটা বাবুল আক্তারের আইনজীবীদের দাবি। তবে সাক্ষী মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এগুলো সত্য না। এজাহার ওনি নিজেই রেডি করেছেন।

এর আগে দুই দফা সাক্ষীতে মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বাবুলের সঙ্গে ভিনদেশি নারী গায়ত্রীর সম্পর্ক ছিল। এটি জেনে যায় মিতু। এরপর তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। সবমিলিয়ে পরকীয়ার কারণে স্ত্রী মিতুকে খুন করান বাবুল। বাবুলের বিশ্বস্ত সোর্স মুসা এই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন। হত্যার পর সাইফুল নামে এক প্রেসের মালিক থেকে তিন লাখ টাকা মুসাকে দেয় বাবুল।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

তবে মামলাটিতে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওই দিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।

এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

গত ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

এমআর/এসএসএইচ/