বন্ধুকে জবাই করে হত্যা : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার
ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের ব্যবসায়ী ওয়াসিম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে আলমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বৃহস্পতিবার(১১ মে) ভোর ৫টার দিকে রামপুরা থানাধীন বনশ্রী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০ এর একটি দল। জাহাঙ্গীর আলম ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরা নামাবাড়ীর মৃত আহাদ বক্সের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
এদিন দুপুরে কেরানীগঞ্জস্থ র্যাব-১০ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির অধিনায়ক(সিও) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকার শরিফ মিয়ার দ্বিতীয় তলা টিনশেড বাড়ির একটি রুম থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তে নিহত ব্যক্তির নাম ওয়াসিম বলে জানতে পারে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
পরবর্তীতে পুলিশ অধিকতর তদন্তের মধ্য দিয়ে হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত জাহাঙ্গীর আলম ওরফে আলম (৪৫), আব্দুল বাতেন (৩৮), পলক রহমান সাগর ওরফে ডেঞ্জার সাগর (১৯), পাপ্পু (২০) ও কিশোর অপরাধী মো.সজিবকে (১৬) চিহ্নিত করে। তাদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। আদালতে ১৭ সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং আসামি মো. পলক রহমান সাগর ওরফে ডেঞ্জার সাগর ও কিশোর অপরাধী সজিবের স্বীকারোক্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
এরপর গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি আদালত জাহাঙ্গীর আলম, বাতেন, পলক রহমান ও পাপ্পুকে ওয়াসিম হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ও পাপ্পু দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করেন আদালত।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিহম ওয়াসিম ও খুনে জড়িতরা পরস্পর বন্ধু ছিল। তারা সবাই একইসঙ্গে চলাফেরা করতো। হত্যার পূর্বে ওয়াসিম জাহাঙ্গীরকে তাদের ক্লাব থেকে বের করে দেয়। এতে জাহাঙ্গীর আলম ও ওয়াসিমের মধ্যে মনোমালিন্য ও বিরোধের সৃষ্টি হয়। বিরোধের জের ধরে জাহাঙ্গীর ওয়াসিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরবর্তীতে ওয়াসিমকে হত্যার জন্য বাতেনের সঙ্গে পরিকল্পনা করে জাহাঙ্গীর। একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে। জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা অনুযায়ী- বাতেন, সজিব, পাপ্পু ও পলক রহমান সাগর ওরফে ডেঞ্জার সাগর মিলে ওয়াসিমকে হত্যার তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করে।
২০১৫ সালের ৩ এপ্রিল দুপুরে ওয়াসিমকে হত্যার জন্য সজিব ও ডেঞ্জার সাগর তাদের নির্ধারিত স্থান ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর বাঁশপট্টী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ স্টেশনের পিছনে শরিফ মিয়ার দ্বিতীয় তলা টিনশেড বাড়ির একটি রুমে অবস্থান করে। বাতেন ও পাপ্পু বাবু বাজার ব্রিজ থেকে ওয়াসিমকে ডেকে এনে রুমের মধ্যে আটকে রাখে।
পরদিন ৪ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে বাতেন, পলক, সজিব ও পাপ্পু হত্যার উদ্দেশ্যে ওয়াসিমের হাত-পা, মুখ বেঁধে ফেলে এবং গরু জবাই করার বড় ছোরা দিয়ে ওয়াসিমকে জবাই করে হত্যার পর পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তা।
জেইউ/এমজে