২৪ মার্চ, ১৯৭১। পাকিস্তান সব নিয়ন্ত্রণই হারায় এই পূর্ব বাংলায়। সামরিক জান্তাদের রক্তচক্ষু আর অস্ত্রের আঘাতকে তুচ্ছ করে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ গোটা বাঙালি জাতি।

একাত্তরের এদিনেই সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অবাঙালিদের সঙ্গে নিয়ে ঘাতক পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে কমপক্ষে তিন শতাধিক বীর বাঙালিকে হত্যা করে। তবুও স্বাধীনতার প্রশ্নে অকুতোভয় বীর বাঙালি। শুধু বঙ্গবন্ধুর চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায়। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার পথ থেকে ফেরাতে না পেরে ঘাতক পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া নির্বিচারে বাঙালি হত্যাযজ্ঞের নীলনক্সা চূড়ান্ত করে।

এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সমাগত মিছিলকারীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিরামহীন ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দেন- ‘আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। আগামীকালের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে বাঙালি নিজেদের পথ নিজেরা বেছে নেবে। আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’ সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, বাংলার জনগণের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে তা বরদাশত করা হবে না।

২৩ মার্চ রাত থেকে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী বোতলগাড়ী, গোলাহাট ও কুন্দুল গ্রাম ঘেরাও করে অবাঙালিদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে একশ নিহত এবং এক হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। শহরে কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য এবং অবাঙালিরা সম্মিলিতভাবে বাঙালিদের বাড়িঘরে আগুন দেয় ও হত্যা অভিযান চালায়।

চট্টগ্রামে পাকিস্তানী সেনারা নৌবন্দরের ১৭ নম্বর জেটিতে নোঙর করা এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাস করতে গেলে প্রায় ৫০ হাজার বীর বাঙালি তাদের ঘিরে ফেলে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা জাহাজ থেকে কিছু অস্ত্র নিজেরাই খালাস করে ১২টি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতা পথরোধ করে। সেনাবাহিনী ব্যারিকেড তৈরি করা জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ২শ শ্রমিক শহীদ হন।

সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে উপদেষ্টা পর্যায়ে বৈঠক হয়। এতে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্টের উচিত তার ঘোষণা দেওয়া। তিনি বলেন, আজ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আলোচনা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। আওয়ামী লীগ আলোচনা আর দীর্ঘায়িত করতে প্রস্তুত নয়।

সূত্র : ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের ইত্তেফাক ও অন্যান্য

জেডএস