২০১৮ সালের আত্তীকরণ বিধিমালা সংশোধন, নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নের বিধি প্রণয়ন এবং সংযুক্তির আদেশ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি।

শনিবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে সংগঠনটি। 

বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ৩০২টি বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরণের জন্য নির্বাচিত করেন। একই বছরের জুন মাসে নির্বাচিত কলেজগুলোতে নিয়োগ ও অর্থ ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরপর শুরু হয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই। প্রথম পর্যায়ে মাউশির নিয়ন্ত্রণাধীন আটটি আঞ্চলিক পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম নির্বাচিত প্রতিটি কলেজে সরেজমিনে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরে প্রতিটি কলেজের জন্য একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারপরই নির্বাচিত কলেজগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য দানপত্র দলিল সম্পাদন করা হয়। 

উল্লেখ্য যে, পরিদর্শন কালীন সময়ে প্রতিটি শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য পাঁচ সেট ব্যক্তিগত ফাইল তৈরি করে দুই সেট পরিদর্শন কর্মকর্তারা নিয়ে যান। বাকি তিন সেট কলেজে সিলগালা করে রেখে যান। বলা হয়, মাউশি চাইলেই দুই সেট কাগজপত্র তাদের পাঠাতে হবে। দানপত্র দলিল সম্পাদন থেকে প্রায় এক বছর তিন মাস সময় পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের আদেশ জারি করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমষ্ঠিত পদ সৃজনের আদেশ জারি করে। সে অনুযায়ী ঢাকা জেলায় চারটি কলেজকে পদ সৃজনের মডেল হিসেবে বিবেচনা করে পাইলটিং শুরু করে। তবে এই পাইলটিংও আলোর মুখ দেখেনি। 

আরও বলা হয়, পুনরায় দ্বিতীয় ধাপে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার লক্ষ্যে মাউশি কর্তৃক প্রদত্ত কাগজপত্রের চাহিদাপত্রসহ ‘ক’,  ‘খ’ ও ‘গ’কে তথ্য দেওয়ার জন্য চার ধাপে কলেজগুলোকে ভাগ করে কাগজপত্র ও দুটি পেন ড্রাইভে তথ্য ২০১৯ সালের মে মাসে মাউশিতে জমা নেওয়া হয়। এসব কাগজপত্র বিবেচনায় না নিয়ে পুনরায় তৃতীয় ধাপে একই বছরের জুন মাসে মূল কাগজপত্র দেখে যাচাই-বাছাই শুরু করা হয়। অনভিজ্ঞ, আনাড়ি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিয়ম কানুন না জানা ব্যক্তিদের দ্বারা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করানো হয়। মূল কাগজপত্র দেখে যাচাই-বাছাই করে পদ সৃজনের ছকে মন্তব্যের ঘরে যেসব অযাচিত মন্তব্য লেখা হয়। অযাচিত মন্তব্যের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নজরে আসায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগে যারা অযাচিত মন্তব্য লিখেছেন, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে পুনরায় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শুরু করা হয়। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত ২০টি কমিটি চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদা আলাদা রেজুলেশন তৈরি করে। পরে পদ সৃজনের আনুষ্ঠানিকতা অর্থাৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সেখান থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সেখান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়, সেখান থেকে ব্যয় বাস্তবায়ন ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ অধিশাখা হয়ে ফের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করে এসেও আবারও অধিকতর যাচাই-বাছাই করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।

দীর্ঘদিন যাবত এসব কলেজে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এতে করে এর মধ্যে অনেক কলেজই শিক্ষকশূন্য হয়ে গেছে। ফলে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া ২০১৮ সালে জারি করা আত্তীকরণ বিধিমালায় নানান অসংগতি বিরাজমান লক্ষ্য করা গেছে। আমাদের দাবিগুলো হলো-

১) আগামী ৩১ জুলায়ের মধ্যে আত্তীকরণের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

২) অযাচিত যাচাই-বাছাই ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে কালক্ষেপণ বন্ধ করতে হবে।

৩) প্রভাষক, প্রদর্শক, গ্রন্থাগারিক, সহকারী গ্রন্থাগারিক, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেসরকারি আমলে প্রাপ্ত বেতন গ্রেডসহ পদ মর্যাদা বহাল করতে হবে।

৪) বৈষম্যমূলক আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮ এর কালো ধারা-উপধারা সংশোধন করে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

৫) সরকারিকৃত কলেজে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নের কম্পোজিশন ও রিক্রুটসমেন্ট রুলস আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করতে হবে।

৬) সরকারিকৃত কলেজগুলোর জন্য জারিকৃত সংযুক্তির আদেশ বাতিল করে আত্তীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদেরকে পদায়ন দেওয়ার সিদ্ধান্তের আদেশ বাতিল করতে হবে। 

এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক জহুরুল ইসলাম, আবু সাঈদ মো. আতিকুর রহমান, মো. আব্দুল মাবুদ রাজা, মো. কামরুল ইসলাম তালুকদার সবুজ, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সাইদুর রহমান, সিকদার মো. ওয়াহিদুজ্জামান, মো. সামছুল আলম ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফসহ (খোকন) আরও অনেকে।

ওএফএ/কেএ