অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। ঝড়ের আঘাতে বেশিরভাগ স্থানীয়দের বাড়িঘর মাটিতে মিশে গেছে। থাকার একমাত্র ঘর হারিয়ে আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন পার করছেন অনেকে। এ অবস্থায় খাবারের চেয়ে ঘর নির্মাণ সামগ্রী, নগদ টাকা ত্রাণ হিসেবে পাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৬ মে) সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে প্রতিবেদককে এ অনুরোধ জানান তারা।

সরেজমিন সেন্টমার্টিনের গলাচিপা থেকে দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, সেন্টমার্টিনকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে একটি রাস্তা। দ্বীপের পূর্ব ও পশ্চিম পাড় হিসেবে বিভক্ত হওয়া সেন্টমার্টিনের দুই পাশেই বাঁশ-পলিথিনের মিশেলে তৈরি ছোট ঘরগুলো ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে গেছে। অনেক ঘর একেবারে মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। এর বাইরে যেসব ঘর টিন-কাঠ দিয়ে বানানো, সেসব ঘরের বেশিরভাগেরই টিনের চালা উড়ে গেছে। সীমানা প্রাচীরও ভেঙে গেছে।

অন্যদিকে ইকো সিস্টেম যেসব রিসোর্ট ছিল সেগুলোর বেশিরভাগই ভেঙে গেছে। তবে আধা পাকা যেসব রিসোর্ট ছিল তাদের প্রায় অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঝেমধ্যে কয়েকটি রিসোর্টের কিছু অংশ উড়ে গেছে বা ভেঙে পড়ে গেছে, এমন অবস্থা দেখা গেছে।

সেন্টমার্টিনে যারা অনেকটা স্বাবলম্বী তাদেরকে এরইমধ্যে ঘর বাড়ি ঠিক করতে দেখা গেছে। তবে যাদের একেবারেই নাজুক অবস্থা, তাদের থাকার আর কোনো জায়গা না থাকায় অসহায়ের মতো দিনযাপন করছেন। খেয়ে পড়ে থাকতে পারলেও রাতে ঘুমানোর ছাদটুকু নেই তাদের মাথার উপর।

স্থানীয়রা বলছেন, সবার ঘরে কম বেশি খাদ্য আছে। কিন্তু ঘরের চালা না থাকায় বাতাস-বৃষ্টিতে কষ্ট পাচ্ছেন। এছাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দ্বীপের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশে। যেখানে ব্যাপক সংখ্যক গাছ ছাড়াও আধাপাকা, টিনশেড সব ঘর ভেঙে গেছে। উড়ে গেছে ছাউনি। স্মরণকালের এমন দুর্যোগে কখনো পড়েননি তারা। খাদ্যের চেয়ে এখন জরুরি ঘর সংস্কার করা। তাই ঘর নির্মাণের সামগ্রী তাদের বেশি প্রয়োজন।

এ দ্বীপে ঘর নির্মাণের প্রধান উপকরণ বাঁশ টিন আর পলিথিন। যা আনতে হয় টেকনাফ থেকে। স্থানীয়রা বলছেন, ঝড়ের পর এসব উপকরণের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। আগে একশ বাঁশ বিক্রি হতো চার হাজার টাকায়। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার। তারপরও পাওয়া যাচ্ছে না।

দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা জহির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বাড়িঘর ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে গেছে। অনেকের বাড়ির চাল উড়ে গেছে। যাদের পলিথিন বাঁশ দিয়ে তৈরি ঘর ছিল সেগুলো একবারে মাটিতে মিশে গেছে। এখন আমি ভাইয়ের বাড়ির বারান্দার অল্প একটু জায়গায় থাকছি পরিবার নিয়ে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দুর্যোগ হলে সরকার ত্রাণ বিতরণ করে থাকে। আমাদের এখানে খাবার নয়, সবচেয়ে বেশি জরুরি বাঁশ, টিন, পলিথিন। মানে ঘরের জন্য যেসব জিনিস প্রয়োজন সেগুলো দরকার। সেইসঙ্গে কিছু নগদ অর্থ সহায়তা পেলে ভালো হয়।

মোহাম্মদ সুমন হোসেন নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে খাবার সামগ্রীর বিশেষ প্রয়োজন নেই। আমাদের থাকার জন্য ঘরবাড়ি দরকার। ঘরগুলো যেহেতু ভেঙে গেছে, সেজন্য এগুলো নতুন করে মেরামত করতে যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন সেসব আমাদের দিলে ভালো হয়।

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণপাড়া সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে উঁচু জায়গা। কিন্তু এখানে কোনো সাইক্লোন সেন্টার নেই। এখানে একটা সাইক্লোন সেন্টার হলে ভালো হয়।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্ত ১২০০ ঘরবাড়ির মেরামতে ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তাসহ দেওয়া হবে। মোখায় মোট ১১ জন আহত হয়েছেন। সেন্টমার্টিন রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এমএইচএন/জেডএস