উদ্বোধনের অপেক্ষায় আরও ১০ বেড
২৬০০ শয্যার ঢামেকে পিআইসিইউ বেড মাত্র ১০টি
দেশের গরিব অসহায় মানুষের স্বল্প খরচে চিকিৎসাসেবা পেতে ভরসার জায়গা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। সারা দেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী এখানে আসেন। হাসপাতালে ২ হাজার ৬০০ শয্যা থাকলেও প্রায় চার হাজারের মতো রোগী সব সময় ভর্তি থাকেন। কিন্তু ২ হাজার ৬০০ শয্যার এই হাসপাতালে শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) বেড রয়েছে মাত্র ১০টি। শয্যা না থাকায় প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সেবা প্রত্যাশী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতাল থেকে পিআইসিইউতে রেফার্ড করলেও শয্যা খালি না থাকায় ওই ইউনিটে বহু রোগী ভর্তি হতে পারছে না। এই ইউনিটে ভর্তির জন্য সিট পেতে আগে থেকেই সিরিয়াল দিতে হয়। অনেকেই হয়ত ভাগ্যক্রমে পেয়ে যান, আবার অনেকের অপেক্ষা করতে করতে শয্যার অভাবে মৃত্যুও হয়। তবে, আরও ১০টি শয্যা বাড়ানোর কথা থাকলেও তা কবে উদ্বোধন করা হবে কেউ জানে না।
বিজ্ঞাপন
শরীয়তপুরের ইব্রাহিম মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নড়িয়া থেকে আমার নাতি সোলায়মানকে ঢামেকে নিয়ে আসি গত ১ মে। হাসপাতালের ২০৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করা হয়। অবস্থা খারাপ দেখে চিকিৎসক তাকে পিআইসিইউতে রেফার্ড করেন। পিআইসিইউতে সিরিয়াল দিয়ে রেখেছি, কিন্তু সিট খালি না থাকায় তাকে সেখানে নিতে পারছি না।
বিজ্ঞাপন
ময়মনসিংহ থেকে আসা সুচি বেগম বলেন, আমার মেয়ে সাবিহার বয়স সাড়ে তিন বছর। তাকে ৩০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেলের ২০৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করি। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় পিআইসিইউতে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। আমরা সিরিয়াল দিয়ে রেখেছি। কিন্তু শয্যাও খালি হয় না আমাদেরও কোনো গতি হচ্ছে না।
মূলত জন্মের ২৯ দিন থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের পিআইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শূন্য থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত এনআইসিইউতে চিকিৎসা হয়। আর ১২ বছরের ঊর্ধ্বে হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
>> জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসার সফল অস্ত্রোপচার
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২২৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক চিকিৎসক বলেন, ঢামেকের ২২৩ নম্বর ওয়ার্ডে চারটি ও ২০৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৬টি পিআইসিইউ শয্যা রয়েছে। ঢামেকের মতো এতো বিশাল হাসপাতালে শিশুদের জন্য মাত্র ১০টি পিআইসিইউ, যা খুবই দুঃখজনক। তবে এরই মধ্যে পিআইসিইউর বেশ কয়েকটি শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেগুলো এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এগুলো ২২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্গে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সারা দেশের নানা বয়সী মানুষ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা চিকিৎসা নিতে আসেন। কোনো বেসরকারি হাসপাতালের পিআইসিইউতে রেখে শিশুর চিকিৎসা করালে পিআইসিইউ বাবদ অনেক টাকা বিল আসে। যা নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।
>> রোগী মারা যাওয়া পর্যন্ত কমিশন ঢোকে তাদের পকেটে
হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, শয্যা ও রোগীর চাহিদা অনুযায়ী এত বড় হাসপাতালে সবকিছুই থাকা উচিত ছিল। যেহেতু এটি সরকারি হাসপাতাল। তাই ক্ষেত্র বিশেষে কিছু জটিলতাও থাকে। তাই নতুন পিআইসিইউ ইউনিট দ্রুত চালু করা দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢামেকে দেড় থেকে দুই বছর আগেও কোনো পিআইসিইউ ছিল না। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে দেশের অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে পিআইসিইউ নেই। শিশু হাসপাতালে পিআইসিইউতে কয়েকটি বেড আছে। দেশের সরকারি হাসপাতালে পিআইসিইউ না থাকলেও রাজধানীর মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠা ক্লিনিকগুলোতে ঠিকই পিআইসিইউ আছে।
পেডিয়াট্রিক রেফারেল চিকিৎসায় অনেক সময় রোগীকে পিআইসিইউতে নেওয়ার দরকার পড়ে। তখন সেই রোগীর কি হতো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখান থেকে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালের পিআইসিইউতে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এ জায়গায় একটা গ্যাপ যেকোনো কারণেই হোক হয়ে গেছে। এই জায়গায় টাচ করা হয়নি। কিন্তু এটি খুবই জরুরি। এখানে পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগ আছে। এই বিভাগে জোড়া শিশু আলাদা করার মতো জটিল জটিল রোগীর অপারেশন হয়। এসব ক্ষেত্রে রোগীকে পিআইসিইউতে রাখার দরকার হয়। আমরা ভিন্ন উপায়ে তাদের রেখেছি। কোনো রকমে ম্যানেজ করছি বা অন্য কোনো হাসপাতালে চলে যেতে হচ্ছে।
>> ঢামেকে সরকারি ইনজেকশন রোগীর কাছে বিক্রি করে দিলেন নার্স
নাজমুল হক বলেন, প্রথমে চার শয্যা নিয়ে পিআইসিইউ চালু হয়। পিআইসিইউ চালাতে গেলে দক্ষ জনবল দরকার। ঢামেকের ডা. অমিত ও ডা. মিশুর মতো কয়েকজন চিকিৎসক আছেন যারা খুবই ডেডিকেটেড। তারাই এটি চালু করেন। এখানে একটি বেড আলাদা করে রাখা হয়েছে। ২৯ দিনের শিশু থেকে শুরু করে ১২ বছর বয়সীদের পিআইসিইউতে রাখা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ১৪ বছর পর্যন্ত রাখা হয়। বয়স এর বেশি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়। এখানে রাখার পর অনেকে আবার বড় হয়ে যায়। যার কারণে একটি বেড আলাদা রাখা হয়েছে। এখন ১০টি বেড আছে। আমরা আরও ১০টি বেড রেডি করেছি। পেডিয়েট্রিক সার্জারিতে আরও পাঁচটি বেড আছে।
তিনি বলেন, ঢামেক হাসপাতালে এ সংক্রান্ত ৫-৬শ রোগী থাকেন। পিআইসিইউতে নেওয়ার দরকার হলে তাদের বাইরে না পাঠানোর চেষ্টা করি। ঢামেকেই তাদের সেবা দিতে চাই। এ মাসে আমাদের নতুন ১০টি পিআইসিইউ শয্যা চালু হবে।
ঢামেক পরিচালক আরও বলেন, নিউনেটাল কেয়ার ইউনিট (স্ক্যানো) আছে যাকে শেখ রাসেল স্ক্যানো বলা হয়। এছাড়াও ঢামেকে এক জায়গায় ৩২টি, কোভিড বিভাগে ২০টি ও মেডিসিন বিভাগে ১৫টি আইসিইউ বেড রয়েছে। আরও ১৫টি আইসিইউ বেড এ মাসেই চালু হবে। মেডিসিন বিভাগে মোট ৩০টি আইসিইউ চালু হবে। নিউরো সার্জারির জন্য ২০টি ও গাইনি বিভাগের জন্য আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বিভাগে আইসিইউ করা হবে। আর সেন্ট্রাল আইসিইউ ইউনিট পুরাতন ভবনের চার তলায়।
>> অপারেশনে স্ক্রু না লাগিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
নাজমুল হক বলেন, রোগীরা যখন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে এসে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা নিতে চায় তখন আমরা সেটা দিতে পারি না। কারণ আগে এখানে ভর্তি থাকা রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কোনো বাচ্চার পিআইসিইউ লাগলে বিবেচনা করা হয় কোন বাচ্চা এখন আগের চেয়ে ভালো আছে। তখন তাকে সেখান থেকে নিয়ে এসে যে বাচ্চার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল তাকে সেখানে স্থানান্তর করি। ২ হাজার ৬০০ বেডের এই হাসপাতালে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার রোগী সব সময় থাকে। আমরা সবাইকে সর্বাত্মক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।
এসএএ/ওএফ