দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ ও ব্যাখ্যা প্রস্তুত করতে এক মাস সময় চেয়েছেন গাজীপুর সি‌টি কর্পোরেশনের সা‌বেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

বৃহস্পতিবার (১৮মে) বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের প্রধান মো. আলী আকবর বরাবর পাঠানো আবেদনপত্র সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদ‌কের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব‌লেন, সা‌বেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সময় চেয়ে আবেদন ক‌রে‌ছেন। যেখানে তিনি কারণ হিসাবে স্বল্প সময়কে দায়ী করেছেন। চিঠি তিনি দুদক চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারকে দিয়েছেন বলে জানি। 

ভুয়া ব্যাংক হিসাবে অবৈধ লেনদেন, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে নোটিশ পাঠায় দুদক। নোটিকে তাকে আগামী ২১ ও ২২ মে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।  

দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবরের নেতৃত্বে দুটি আলাদা অনুসন্ধান টিম জাহাঙ্গীর আলমকে তলব করে। দুই টিমের অপর দুই সদস্য হলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলিয়াজ হোসেন ও মো. আশিকুর রহমান।

এ বিষয়ে গত ১৭ মে সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের একটি অভিযোগ ও ২০২২ সালের আর একটি অভিযোগ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতিমধ্যে অনেকেরই বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। অনেক কাগজপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযোগের অনুসন্ধানের শেষ পর্যায়ে তার বক্তব্য প্রয়োজন। এ কারণেই তাকে তলব করা হয়েছে। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো  সম্পর্ক নেই।

অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্র জানা যায়, গাজীপুর সিটির আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতসহ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেছেন।

অপর অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ও কতিপয় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।

গত বছরের জুনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতসহ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। একইসঙ্গে দুই সদস্যের টিম গঠন করা হয়। পরবর্তীতে দুদকে তার বিরুদ্ধে আরেকটি নতুন অভিযোগ জমা পড়ে।

২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

ওই প্রজ্ঞাপনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া দরপত্র, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দর দেওয়ার অনুরোধ সংক্রান্ত (আরএফকিউ) দরপত্রে অনিয়ম, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষ্যে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিবছর হাটবাজার ইজারার টাকা যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এছাড়া ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া রাস্তা প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত অভিযোগও রয়েছে।

এবার আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েও প্রার্থী হতে না পারায় তার মাকে প্রার্থী করে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্ত না মানা এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গত সোমবার (১৫ মে) তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

আরএম/এসকেডি