নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে সাইবার অপরাধ। বুলিং কমলেও সাইবার অপরাধের বেশি শিকার নারী ও শিশুরা। বেড়েছে আর্থিক প্রতারণা। তবে উদ্বেগজনক বিষয়টি হচ্ছে, ২০১৮ সালে ৫টি জরিপে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অভিযোগ দেওয়ার প্রবণতা কমেছে। ২০১৮ সালে ছিল ৬১ শতাংশ। তা নেমে হয়েছে ২০.৮৩ শতাংশ।

সাইবার স্পেসে ভুক্তভোগীদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে শনিবার (২০ মে) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে প্রকাশিত বাংলাদেশ সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৩ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এই খাতের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) কর্তৃক ধারাবাহিকভাবে পঞ্চমবারের মতো প্রকাশিত এ প্রতিবেদন বলছে, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েছে ৩৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে ২০১৫-২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাফে। সেখানে ১১টি ট্যাবে করা তথ্য বিশ্লেষণে অন্যান্য অপরাধের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে বলে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। 

শিশু ভুক্তভোগীদের হার বেড়েছে ১৪০ শতাংশ

অন্তর্জালে শিশু ভুক্তভোগীদের হার ক্রমেই বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক। ২০২৩ সালের জরিপে ভুক্তভোগীদের ১৪.৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০.৮৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিকমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি (২ শতাংশের বেশি) অপপ্রচারের শিকার হয় শিশুরা। বয়সভিত্তিক অপরাধের ধরণে ভুক্তভোগীদের মধ্যে তরুণরা (১৮-৩০ বছর) সর্বোচ্চ (১২ শতাংশের বেশি) একই ধরনের অপরাধের শিকার। 

ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশই তরুণ

২০২৩ সালের জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীরাই ভুক্তভোগী। ২০১৮ সালে জরিপ থেকে এ পর্যন্ত একাধারে এই বয়সী ভুক্তভোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচার ও আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার। 

আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার সর্বোচ্চ ২৫.১৮ শতাংশ নারী

২০২২ সালের জরিপের মতোই জেন্ডারভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে নারীরাই সাইবার অপরাধের শিকার সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার ভুক্তভোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫.১৮ শতাংশ নারী।

ভুক্তভোগীদের ৫৫ শতাংশই জানেন না তথ্যপ্রযুক্তি আইন

সমীক্ষা বলছে, ভুক্তভোগীদের ৫৫ শতাংশই জানেন না বাংলাদেশের প্রচলিত তথ্যপ্রযুক্তি আইন সম্পর্কে। গত পাঁচ বছর ধরেই ভুক্তভোগীদের গড়ে প্রায় অর্ধেকই আইন বিষয়ে অজ্ঞ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অভিযোগে অনীহা বাড়ছে

২০২৩ সালে পরিচালিত পাঁচটি জরিপে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের মধ্যে কতজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন, তার ফল উদ্বেগজনক। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভুক্তভোগীদের মধ্যে অভিযোগকারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালের জরিপে যেখানে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ, সেখানে ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ২০.৮৩ শতাংশ।

আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার সাত কারণ

২০২৩ সালে জরিপ বলছে, আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হার ২৪ শতাংশ ভুক্তভোগীর সিংহভাগই জানেন না কীভাবে কোথায় কার কাছে অভিযোগ করতে হবে। দ্বিতীয়ত গোপন রাখতে চায় ২০ শতাংশ, আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির কথা জানিয়েছেন ১৮ শতাংশ ভুক্তভোগী। আবার আইনি পদক্ষেপ নিয়েও ৮০ শতাংশ ভুক্তভোগী অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

সিক্যাফ কার্যনির্বাহী সদস্য খালেদা আক্তার লাবনীর সঞ্চালনায় প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা করেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা, বিটিআরসি'র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক ব্রিগে.জে. মো. নাসিম পারভেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান, সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) গবেষণা কর্মকর্তা নাহিয়ান রেজা সাবরিয়েত।

জেইউ/এসকেডি