দীর্ঘদিন ধরে আশ্বাস দিলেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না আলেশা মার্টের গ্রাহকরা। নানা পর্যায়ের যোগাযোগ করেও টাকা আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। বিভিন্ন সময় টাকা পরিশোধ করার সময় দিলেও গ্রাহকদের কোনো টাকা ফেরত দেয়নি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি গ্রাহকরা। এখন মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। তবে মামলার আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় এ টাকা ফেরত চান তারা।

রোববার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় আলেশা মার্ট কাস্টমার অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন। 

সংগঠনের আহ্বায়ক সোহান চৌধুরী বলেন, এর আগেও আমরা দেখেছি, ই-কমার্সের প্রতারণার শিকার হয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়া হলেও কোনো উপকার হয়নি। মালিক গ্রেপ্তার হয় কিন্তু গ্রাহকরা টাকা ফেরত পায় না। তাই আমাদের দাবি, আলেশা মার্টের মালিককে গ্রেপ্তার নয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা ভোক্তার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মধ্যস্থতায় ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের একটি বৃহত্তর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট। আলেশা হোল্ডিং লিমিটেডের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মঞ্জুর শিকদার এবং ডিরেক্টর সাদিয়া চৌধুরী। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে এ প্রতিষ্ঠানটি আত্মপ্রকাশ করে। এরপর নানা অফার দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করে। আমরা এসব ক্যাম্পেইন থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করি। নিয়ম অনুযায়ী ৪৫ দিনের ডেলিভারি দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা করা হয়নি। পণ্য ডেলিভারি দিতে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। যা আজ পর্যন্ত সমাধান হয়নি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রায় সাত হাজার গ্রাহক এ প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা পান।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল কবির বলেন, এর মধ্যে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। এক পর্যায়ে আমরা আলেশা মার্টের অফিস ঘেরাও করেছি। তাতেও সাড়া মেলেনি। এর মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে কয়েক দফা সময় দিয়েও টাকা দেয়নি কর্তৃপক্ষ। মালিকদের দাবি, তিনি যার কাছে টাকা পাবেন তারা দেয়নি তাই তিনি দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অনতিবিলম্বে আমাদের টাকা ফেরত না দিলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। এ সময় তারা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে আছে- 

১. গ্রাহকদের প্রকৃত সংখ্যা এবং তাদের মোট পাওনা টাকার পরিমাণ অর্ডার আইডিসহ চূড়ান্ত লিস্ট আকারে প্রকাশ করত হবে।  

২. ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর থেকে সেভাবে ঢাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছিল ঠিক সেভাবে লিস্ট প্রকাশ করে পুনরায় কার্যক্রম চালু করা।

৩. এস. এস বাইকের কর্ণধার মেহেদী মোটরবাইক ডেলিভারি দেওয়ার জন্য আলেশা মার্ট থেকে অগ্রিম ১০ থেকে ১২ কোটি নিয়ে পরবর্তী বাইক ডেলিভারি করেনি। বর্তমানে তিনি দুবাই পলাতক। তাকে প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে এই টাকাটা ফেরত আনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং এ টাকা সাধারণ গ্রাহকদের দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

 ৪. আমরা বিভিন্ন ভাবে জানতে পেরেছি গ্রাহকের টাকা আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে দেন যা পরবর্তীতে ফেরত আসেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় এসব টাকা ফেরত এনে গ্রাহকদের মাঝে ফেরত দিতে হবে।

৫. আমাদের দাবি, চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর সাদিয়া চৌধুরীকে আইনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার না করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর এর কঠোর নজরদারিতে রেখে গ্রাহকদের পাওনা টাকা দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

৬.  সেই সঙ্গে তারা যেন বিদেশ পালিয়ে না যেতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। 

৭. সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে টাকা কীভাবে ফেরত দেওয়া যায় তার সমাধান খোঁজতে আলেশা মার্টের চেয়ারম্যানকে গ্রাহকদের সঙ্গে বসতে হবে। অন্যথায় আলেশা মার্টের গ্রাহকরা পাওনা টাকা আদায়ে পরবর্তীতে কঠোর থেকে কাঠোরতর কর্মসূচি পালন করবে।

এনএম/এসকেডি