কারের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা, সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলারের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং চালকরা।

বুধবার (৩১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‌অ্যাপ-বেইজড ওয়ার্কার্স ফেডারেশন অব বাংলাদেশের ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণসহ ১৪ দফা দাবি জানান তারা।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, অ্যাপভিত্তিক কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার ফলে আমাদেরকে (চালকদের) আজ নিঃস্ব করে পথে বসিয়ে ছাড়ছে। তারা যখন তখন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে কর্মহীন করার মতো হীন কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। বরং যাত্রীর সঙ্গে অ্যাপসের মাধ্যমে শুধুমাত্র যোগাযোগ স্থাপন করেই আমাদের কষ্টার্জিত আয় থেকে ২৫ শতাংশ কমিশন কেড়ে নিচ্ছে।

তারা আরও বলেন, সারাদেশ যেখানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখীর কারণে সাধারণ শ্রমিকরা হতাশায় হাবুডুবু খাচ্ছে, তখন অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো তাদের কমিশন না কমিয়ে বরং অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে ভাড়া কমিয়ে দেওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। তাই উবার ও পাঠাওসহ অ্যাপভিত্তিক ডিজিটাল রাইড সেবা পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলো কর্তৃক চালকদের নিঃস্ব করার পলিসির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তাদের দাবিগুলো হলো-

১) অ্যাপস নির্ভর রাইড পরিষেবা প্রদানকারী অপারেটিং কোম্পানিগুলোকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করা।

২) দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় প্রতিটি রাইডে ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বেইজড কিলোমিটার ও মিনিট অনুযায়ী ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ করা।

৩) কার-এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা, সিএনজি চালিত থ্রি হুইলারের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা।

৪) অপরাধ প্রমাণ ব্যতীত কোনো পেশাজীবী চালকের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে কর্মহীন করার মতো ঘৃণিত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি অনতিবিলম্বে সকল বন্ধ অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া।

৫) অপরাধ প্রমাণিত না হলে প্রতিটি বন্ধ অ্যাকাউন্টের বিপরীতে প্রত্যেক চালককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতি দিনের জন্য এক হাজার টাকা হারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

৬) রাইড পরিষেবায় নিয়োজিত যানবাহনে নির্দিষ্ট লোগো বা স্টিকার প্রদানসহ অপরাধ প্রমাণের স্বার্থে প্রতিটি কারে শব্দ ও ভিডিও চিত্র ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা স্থাপন করা।

৭) কোম্পানির অ্যাপে রাইডে থাকা অবস্থায় যেকোনো দুর্ঘটনায় চালকের অঙ্গহানির ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা ও প্রাণহানির ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা হারে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক বা তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

৮) কোম্পানি কর্তৃক সব চালকদের আইনি সুরক্ষাসহ নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদানের পাশাপাশি যাত্রী ও চালকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মোটরসাইকেলে হেলমেট ও ইলুমিনেটর পোশাক সরবরাহ করা।

৯) যানবাহন ও চালকের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনি সহযোগিতা প্রদানসহ দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করার জন্য ২৪ ঘণ্টার কোম্পানির সাপোর্টিং টিম প্রস্তুত রাখা।

১০) চালকদের বিষয়ে যেকোনো আইনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারিত আর্বিট্রেশন বোর্ডের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় শ্রম আইন, আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও আইএলও কনভেনশন অনুসরণ করা।

১১) অ্যাপভিত্তিক সেবা খাতের সব শ্রমিককে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিক স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে এই পেশার শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেওয়া।

১২) এনলিস্টমেন্টকৃত অ্যাপভিত্তিক রাইড পরিষেবায় নিযুক্ত যানবাহনগুলোকে ২৪ ঘণ্টা জ্বালানি গ্রহণের সুযোগ দেওয়া।

১৩) অ্যাপভিত্তিক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানোর স্বার্থে সুনির্দিষ্ট স্থানে পাবলিক টয়লেটসহ যানবাহন পার্কিংয়ের স্থান দেওয়া।

১৪) রাইড পরিষেবায় নিয়োজিত যানবাহনগুলোকে যত্রতত্র থামিয়ে গাড়ির পেপার পরীক্ষার নামে প্রশাসনিক হয়রানি কমিয়ে অ্যাপভিত্তিক শ্রমিকদের কর্মসময় ব্যয় রোধে সহযোগিতা করা।

অ্যাপ-বেইজড ওয়ার্কার্স ফেডারেশন অব বাংলাদেশের আহ্বায়ক বেলাল আহমেদের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংযের চালকরা উপস্থিত ছিলেন।

ওএফএ/এমএ