বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, একসময় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছুসংখ্যক শিক্ষকের নারীবিদ্বেষী ও কুরুচিপূর্ণ মনোভাবের কারণে যে অধোগতি দেখা যাচ্ছে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে।

বুধবার (৩১ মে) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানান তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কর্মসূচির আয়োজন করে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়, সেখানে একজন শিক্ষকের চেহারা যদি এমন হয় তাহলে তিনি কেমন ছাত্র তৈরি করবেন? সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা প্রতিহত এবং অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত ২১ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় সভাপতির অফিস কক্ষে বিভাগের সভাপতি এবং অন্যান্য শিক্ষকের সামনে একই বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এনামুল হক কর্তৃক বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. নাজমা আফরোজের প্রতি যৌন উসকানিমূলক বক্তব্য এবং আচরণের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।

একইসঙ্গে ২০০৯ সালে হাইকোর্টের প্রদত্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ নামে কমিটি গঠন করা বিষয়ক রায়ের বাস্তবায়ন এবং অনতিবিলম্বে এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের দাবি জানান। পাশাপাশি তারা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

গণমাধ্যমকে ঘটনার প্রকৃত সত্য উন্মোচন করা ও হাইকোর্টের নির্দেশনামা বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয়কে আরও তৎপর ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করে ডা. ফওজিয়া মোসলেম গণমাধ্যমসহ সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ নামে কমিটি গঠনে অনুরোধ জানান।

সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, একটি নারীবিদ্বেষী সমাজে আমরা বসবাস করছি, যেখানে নারীর সংগ্রাম করে টিকে থাকার মতো শক্ত অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি।

উপস্থিত বক্তারা সরকার প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাইকোর্টের রায়টি সঠিকভাবে মেনে না চলায় যৌন হয়রানির ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সমগ্র দেশে যখন সমতার আন্দোলন চলছে তখন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে নারীর এই দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তারা প্রশ্ন রাখেন এই ঘটনা তরুণ সমাজের জন্য কী মেসেজ দেবে? তাদের নীতি নৈতিকতা কোন পথে চালিত হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যে থাকা ব্যাপক ব্যবধানকে দূর করে যৌন হয়রানির ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জোরালো দাবি জানান।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস; প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ; অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম; ঢাকা মহানগর কমিটির আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুননেসা খান বক্তব্য রাখেন।

মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট দীপ্তি শিকদারের পরিচালনায় মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের জয়া সরকার। এছাড়াও সংহতি প্রকাশ করে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ।

জেইউ/ওএফএ/এসএম