পরিবেশ দূষণ রোধ এবং বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সবুজ আন্দোলন’। সোমবার (৫ জুন) প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।

সবুজ আন্দোলনের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে পরিকল্পনা ও দূরদৃষ্টির অভাবে পরিকল্পিত নগরায়ন সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা শহরে পুকুর কিংবা জলাশয়ের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার ৪০০, সবুজায়নের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ ভাগ, খালের সংখ্যা ছিল কমবেশি শতাধিক। ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ফলে বর্তমান সময়ে পুকুর কিংবা জলাশয়ের সংখ্যার এসে দাঁড়িয়েছে ২০০ শতের ও নাম, খালের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০টির নিচে এবং সবুজায়ন অবশিষ্ট রয়েছে ২ শতাংশের কম। 

তিনি বলেন, বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে বর্তমান দুই মেয়র। কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও বাসযোগ্য নগর রয়েছে অধরা আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে ঢাকা রয়েছে তলানিতে।

সবুজ আন্দোলনের ১০ দফা দাবি হলো
১. চলতি বর্ষা মৌসুমে ঢাকা শহরের চারপাশের ওয়াক ওয়ের পাশ জুড়ে, সরকারি সব পতিত জায়গা, রেললাইনের পাশে, আবাসন প্রকল্পে ২৫ ভাগ ও প্রত্যেকের বাসা বাড়ির ছাদে সবুজায়ন নিশ্চিত করতে হবে। 

২. বায়ু ও শব্দ দূষণ বন্ধে কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন, নির্মানাধীন সব প্রকল্পে দূষণের জন্য ঠিকাদার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে জরিমানা এবং জবাবদিহিতার মধ্যে আনার পাশাপাশি সপ্তাহে দুইবার রাস্তা পানি দিয়ে ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. নতুন করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ২টি করে পুকুর কিংবা জলাশয় খননের পাশাপাশি পুরাতন পুকুরগুলোকে সংস্কার করতে হবে। 

৫. ঢাকার চারপাশের নদীর ব্যবহার বাড়াতে নদীর খনন, নদীর পাড় জুড়ে স্টেশন নির্মাণ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নৌযান চলাচলের উপযোগী করতে হবে।

৬. ঢাকার মধ্যে অবস্থিত সর্বপ্রকারের কেমিক্যাল ও গার্মেন্টসের কারখানা স্থানান্তর করে শহরের পার্শ্ববর্তী জেলাতে স্থাপন করতে হবে।

৭. ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করতে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাতে বর্জ্য রাখার জায়গা অধিগ্রহণ, মেডিকেল বর্জ্য ও কাচের পণ্যের বর্জ্য আলাদা করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৮. ঢাকা শহরের মধ্যে অবস্থিত খালকে পুনরুদ্ধার করে সীমানা পিলার নির্ধারণ, ওয়াক ওয়ে নির্মাণ ও জলজ প্রাণীর প্রজনন বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 

৯. ঢাকা শহরের অবশিষ্ট গাছ কর্তন বন্ধ করা, নদীর পানি দূষণ বন্ধে বাইপাস ক্যানেল পদ্ধতি গ্রহণ, পরিবহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে জোড় বিজয়ের পদ্ধতি অবলম্বন করে পরিবহন চাপ কমানো।

১০. বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়সহ পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পরিবেশ নিয়ে কাজ করে সংগঠন, গবেষক ও গণমাধ্যম কর্মীদের সমন্বয়ে এসটেক হোল্ডার বডি তৈরি করার পাশাপাশি পরিবেশ খাতের সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়িত সব ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের মহাসচিব মহসিন সিকদার পাভেল, অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন রুপা, পরিচালক অধ্যক্ষ নাদিয়া নূর তনু, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের অর্থ সম্পাদক আলমগীর হোসেন পলাশ, সহ অর্থ সম্পাদক সালমা আক্তার শাস্তা, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম চৌধুরী অর্ণব, নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক সাহিন আরা সুলতানা, সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আজিজ, ছাত্র পরিষদের সভাপতি মো. সোহাগ খান প্রমুখ।

ওএফএ/এসএম