নিহত আল-আমিন

রাজধানীর মুগদা থানা এলাকায় কর্মচারীর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে দোকান মালিক মো. জজ মিয়া ওরফে আল-আমিন (২৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় কর্মচারী জুবায়ের (১৯) ও তার আপন ভাই শাকিলকে (২৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১২টার সময় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের চাচাতো ভাই রেদওয়ান আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাত্র তিন মাস হলো আমার ভাই বিয়ে করেছে। মুগদা চৌরাস্তায় আমার ভাইয়ের মোবাইল রিচার্জ, বিকাশ, রকেট, নগদ ও লন্ড্রির সবচেয়ে বড় দোকান। তার কাছে সবসময় লাখ লাখ টাকা থাকে। কর্মচারী জুবায়েরের বাড়ি আর আমাদের বাড়ি পাশাপাশি। ছোটবেলায় তার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তাকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো করে দেখতেন ভাই (আল-আমিন)। গত কয়েকদিন আগে বিকাশে ভুল নম্বরে টাকা পাঠানোর ঘটনায় ভাই একটু রাগারাগি করেন।

তিনি বলেন, এরপর থেকে সে তার বড় ভাই শাকিলের সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা করে। শাকিল জুতা বানানোর কাজ করে। গতকাল রাতে দোকান বন্ধ করে আল-আমিন ভাই বাসায় গিয়ে বাথরুমে ঢোকেন। জুবায়ের ভাইয়ের সঙ্গে একই বাসায় থাকতেন। দরজা নক করলে ভাবি খুলে দেখেন জুবায়ের ও আরেকজন মুখে মাস্ক পরে দাঁড়িয়ে আছেন। ভাবি বললেন, তোমার পেছনে কে? এ সময় আল-আমিন ভাইয়ের ছোট ভাই মো. হুসাইন এসে বলেন, ও কে? সঙ্গে সঙ্গে শাকিল মুখ চেপে ধরে ছুরি দিয়ে হুসাইনকে কোপ দিলে ভাবির চিৎকারে আল-আমিন ভাই বাথরুম থেকে বের হন। এ সময় হুসাইন ঠেকাতে গেলে তার হাতের আঙ্গুল কেটে যায়। আল-আমিন ভাই বললেন, কী হয়েছে আমাকে বল। এটা বলে বড় ভাইকে ফোন দেয় তাড়াতাড়ি বাসায় আস। এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আল-আমিন ভাইয়ের গলায় ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। এরপর তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।

রেদওয়ান বলেন, তাদের হাতে ছিল, এসিডের বোতল। ভাইয়ের স্ত্রী ও ছোট ভাই বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগাতে গেলে সেখানে লাথি মারে। এরপর ভাই ওখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় মারা যান। আশপাশের লোকজন এলে গলায় ছুরি ধরে বলে, এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেব। পাঁচতলা থেকে নিচে নামতে নামতে এসিড মারতে থাকে। যদিও কারও গায়ে লাগেনি। এরপর নিচে গেলে বাসার সবার চিৎকারে তাদের দুজনকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভাইদের সবাইকে হত্যা করে সব কিছু নিয়ে যাওয়া।

পরে পুলিশ এসে মরদেহ নিয়ে যায়। ময়নাতদন্তের জন্য শনিবার (২৭ মার্চ) ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

নিহত আল-আমিন উত্তর মুগদার ১২৪/এ সরদার লেনে স্ত্রী, ছোট ভাই ও হত্যাকারী জুবায়েরকে নিয়ে পাঁচতলায় ভাড়া থাকতে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আল-আমিন ছিল মেজ। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার আনোয়ারপুরে। স্থানীয় আবু তালেবের ছেলে।

এ বিষয়ে মুগদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সোয়েব খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই এবং জুবায়ের ও শাকিলকে গ্রেফতার করি। ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। পরে মরদেহের সুরতহাল শেষে তার ঢামেকের মর্গে পাঠাই। গলায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা উদঘাটনে আমরা তদন্ত করছি।

এফআর