কালো পাহাড় আসলে কোনো পাহাড় নয়। যা একটি গরুর নাম। আকার-আকৃতি, ওজন, রঙ, উচ্চতা, বিশাল দেহ সব মিলিয়ে শতভাগ নামের সঙ্গে যে মিল রয়েছে তা সবাইকে স্বীকার করতেই হবে। রাজধানীর আফতাবনগর কোরবানির পশুর হাটে গতকালই এসে পৌঁছেছে কালো পাহাড়। হাট ঘুরে ধারণা করা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত এ হাটে এটিই সবচেয়ে বড় গরু।

খুলনার দিঘলিয়ার পানিগাতি থেকে মালিক আসলাম মোল্লার সঙ্গে এ হাটে এসেছে গরুটি। এ একটি মাত্র গরু নিয়েই তিনি আফতাবনগর হাটে এসেছেন। বিশাল দেহের অধিকারী কালো পাহাড় নামে গরুটির চারদিকে নিরবিচ্ছিন্নভবে চলছে স্ট্যান্ড ফ্যান, যেন গরুটির একটুও গরম না লাগে। দুই/তিনজন সার্বক্ষণিক চালাচ্ছেন তার পরিচর্যা, খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই তার সামনে ধরা হচ্ছে খাবারের পাত্র। একটু পর পর গামছা ভিজিয়ে মুছে দেওয়া হচ্ছে কালো পাহাড়ের পুরো শরীর। মাঝে মাঝে হাতপাখা দিয়েও করা হচ্ছে বাতাস। সব মিলিয়ে খুলনা থেকে সুদূর পথ পেরিয়ে ঢাকার আফতাবনগর হাটে আসা ৩৩ মণ ওজনের কালো পাহাড়ের দিন কাটছে বেশ বিলাসিতায়।

আফতাবনগর হাট শুরু হয়েছে যে প্রান্ত থেকে তার একটু সামনে এগিয়ে গেলেই ঢোকার পথের পাকা রাস্তা সংলগ্ন বামদিকে দেখা মিলবে এ কালো পাহাড়ের। এ গরুটির মালিক আসলাম মোল্লার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরুটির ওজন ৩৪ মনের কম আর ৩৩ মণের কিছুটা বেশি। তার ভাষ্যে এটিই আফতাবনগর হাটে এখন পর্যন্ত বড় গরু। বিশাল দেহের কালো পাহাড়ের বয়স ৪ বছর ৬ মাস। উচ্চতা ৬ ফিট, লম্বা ১১ ফিট, চওড়া ১০ ফিট ও দাঁত রয়েছে ৮টি। যার দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।

আফতাবনগর হাটের প্রবেশমুখেই গরুটিকে রেখেছেন তার মালিক। ফলে প্রথমেই হাটে আগতদের দৃষ্টি যাচ্ছে কালো পাহাড়ের দিকে। পাশাপাশি সেলফি ঝড়ে উড়ছে কালো পাহাড়। হাটে আগতদের বেশিরভাগই দাঁড়িয়ে গরুটির সঙ্গে সেলফি তুলছেন। কালো পাহাড় সম্পর্কে গরুটির মালিকের কাছে হাজারো প্রশ্ন রাখছেন হাটে আগতরা। কি খায়? কতগুলো খায়? কোথা থেকে এসেছেন? এটাই তার বড় গরু নাকি? দাম কত? ওজন কেমন? এমন নানান সব প্রশ্ন করেছেন হাটে আগতরা। গরুর মালিকও এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

আফতাবনগর হাটের আকর্ষণ ৩৩ মণ ওজনের কালো পাহাড়ের বিষয়ে গরুর মালিক আসলাম মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুব যত্নে আমার এ কালো পাহাড়কে বড় করেছি, এবারের কোরবানির জন্য উপযুক্ত করেছি। এ হাটে এনেও তার কোনো যত্নের কমতি নেই। সঠিক সময়ে খাওয়ানো, সার্বক্ষণিক ফ্যানের বাতাস, গামছা দিয়ে শরীর মুছিয়ে দেওয়াসহ সার্বক্ষণিক যত্ন চলছে তার। বলতে গেলে বিলাসিতায় দিন কাটছে তার।

তিনি আরও বলেন, খুলনায় আমার খামার রয়েছে। সেখান থেকেই গরুকে এ হাটে এনেছি। তবে এখন পর্যন্ত সেভাবে ক্রেতারা আসতে শুরু করেননি, সে কারণে এখনো দরদাম উঠেনি। তবে যারাই হাটে আসছেন তারা প্রত্যেকেই দাঁড়িয়ে কালো পাহাড়কে দেখছেন, দাম শুনছেন আবার কেউ কেউ ছবি বা সেলফিও তুলে নিচ্ছেন।

নিজের কিশোর সন্তানকে সঙ্গে আফতাবনগর হাটে এসেছেন মইনুল ইসলাম নামের রাজধানীর একজন বাসিন্দা। হাটে ঢুকতেই এমন বড় গরু দেখে, দাঁড়িয়ে যান তিনি। কথা বলেন গরুর মালিকের সঙ্গে, সবশেষ নিজের সন্তানকে গরুর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেন।

মইনুল ইসলাম বলেন, পুরো হাট ঘুরে দেখলাম এটাই বড় গরু। এত বড় গরু কেনার সামর্থ্য যদিও আমার নেই, তবুও আগ্রহ ভরে গরুটাকে দেখলাম ও গরুর মালিকের সঙ্গে কথা বললাম। আমার সন্তান এত বড় গরু দেখে তো অবাক, বিস্ময় নিয়ে দেখছিল কালো পাহাড়কে। তাই তাকে এর সঙ্গে ছবি তুলে দিলাম।

হাটে আগত আরেক ক্রেতা মকিদুর রহমান বলেন, আসলে আজ হাটে এসেছি গরুর দরদাম জানতে। এসে বুঝলাম মাঝারি গরুর দাম বেশি যাচ্ছে। হাট জমজমাট হলে তখন দামের মূল বিষয়টা বোঝা যাবে। হাটে ঘুরতে ঘুরতে এ কালো পাহাড় নামে গরুকে ঘিরে দেখি মানুষের ভিড়। আর এ ভিড় দেখে আমিও কাছে গিয়ে দেখলাম এত বিশাল আকৃতির এ গরুকে। আমার কাছেও মনে হলো এটিই হাটের সবচেয়ে বড় গরু।

এএসএস/এফকে