দুর্নীতিবাজরা এখন আতঙ্কে থাকে ও নিদ্রাহীন জীবনযাপন করতে হয়। এখন বলতে পারি, দুদক শুধু চুনোপুঁটি নিয়ে কাজ করে না, রাঘব-বোয়ালও ধরা পড়ছে। এমন সময় আসবে বাংলাদেশেও উন্নত দেশের মতো দুর্নীতিবাজ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল খান দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ বছর পূর্ণ করলেন। সোমবার (২৬ জুন) শেষ কর্মদিবসে দায়িত্ব পালন শেষে ঢাকা পোস্টের কাছে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ২০১৮ সালের ২ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুদকের কমিশনার হিসেবে পাঁচ বছর শেষ করলেন ২৬ জুন। আগামী ১ জুলাই তার শেষ কর্মদিবস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোরবানি ঈদের চারদিনের সঙ্গে আরও একদিন সরকারি ছুটি হওয়ায় ২৬ জুন শেষ কর্মদিবস ছিল তার।

দুদকের বিদায়ী কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিশনে পাঁচ বছর কাজ করেছি। এখানে অনেক অর্জন আছে, অতীতে দুদককে নখ দন্তহীন বাঘ বলা হতো। দুদক শুধু চুনোপুঁটি নিয়ে কাজ করে, রাঘব-বোয়াল ধরে না। এরকম একটি বদনাম ছিল। কিন্তু আমরা এখন বলতে পারি, শুধু চুনোপুঁটি নিয়ে কাজ করি না, রাঘব-বোয়ালও ধরা পড়ছে। এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। নখ-দন্তহীন বাঘ, এই কথাটি এখন ঠিক না। এখন দুদককে অনেকেই ভয় পায়। দুর্নীতিবাজরা এখন আতঙ্কে থাকে। তাদের নিদ্রাহীন জীবনযাপন করতে হয়। কাজেই আগের বদনাম অপসারণ না হলেও সেটা ম্লান করেছি বলতে পারি।

বিগত দিনের সাফল্যের কথা জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক খান বলেন, সাফল্যের কথা বললে বলব, শতভাগ সাফল্য বলতে কিছু নেই। এটা চলমান প্রক্রিয়া। গত বছরের তুলনায় এ বছর ভালো, আগামী বছর আরও ভালো হবে। ক্রমান্বয়ে আমরা সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে চাই। তবে সময় লাগবে, কারণ দুর্নীতি রোধ করা এতো সহজ নয়।

মানুষের মগজে দুর্নীতির সুপ্ত বীজ লুকিয়ে আছে এমন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, সবাই তাড়াতাড়ি বড় হতে চায়, অন্যের ধনে পোদ্দারি করতে চায়। অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে জীবন-ধারণের মান উন্নত করতে চায়। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই এমন ধারণা লালন করি আমরা। সেজন্য দুর্নীতি রাতারাতি দমন করা সম্ভব না। তবে আমি আশাবাদী। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুনীতি গ্রহণ করেছে ও দুদকও সেই নীতিতেই চলে। যখন সরকার ও দুদক একই পথে চলে, তখন দুর্নীতি দমন সময়ের ব্যাপার। এক সময় অবশ্যই উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।

যতদিন বাঁচব দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় কথা বলব। দুদকে কাজ করেছি, সেই দায়িত্ববোধ ও ঋণ থেকে আমি বলব। ফরমাল ও ইনফরমাল কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক যেখানেই বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাই, দুর্নীতি না করার জন্যই কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির অনুসন্ধান বিভাগের বিদায়ী কমিশনার।

কর্মদিবসের শেষদিনে দুদক থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে ড. মো. মোজাম্মেল হক খানকে। এছাড়া দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনসহ সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাকে। 

কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালনের আগে তিনি জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক, রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব, উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

দুদকের নতুন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সচিব মোছা. আছিয়া খাতুন। গত ১৩ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তাকে দুদক কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুদকের ইতিহাসে প্রথম নারী কমিশনারও তিনি। আগামী ২ জুলাই তিনি মোজাম্মেল হক খানের স্থলাভিষিক্ত হবেন।

দুদক আইন অনুযায়ী, তিনজন কমিশনারের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হয়। তাদের মধ্য থেকে একজন হন চেয়ারম্যান। বাকি দুইজন অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। যাদের মেয়াদ হয় পাঁচ বছর।

আরএম/জেডএস