৩০ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলার আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক
৩০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের মালিক গুলজার আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গুলজার আহমেদের কর্তৃক দুদকের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ৪৮০ সম্পদের তথ্য প্রদর্শন না করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দেওয়াসহ মোটি ৩০ কোটি ৫৩ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪৯ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের দায়ের করা মামলায় তার বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬(২) এবং ২৭(১) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফ সাদেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলায় গুলজার আহমেদের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক দিলদার আহমেদ, তার আপন দুই ভাই গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমদকে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য তলব করেছিলেন তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা আখতার হামিদ। ওই সময় তারা সময় চেয়ে দুদকে আবেদন করেন। এর মধ্যে তারা অন্য মামলায় কারাগারে থাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি দুদক। এরপর অনুসন্ধান কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। এর দুই বছর পর ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আপন জুয়েলার্সের তিন মালিককে ফের দুদকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। নোটিশে আপন জুয়েলার্সের তিন মালিকের মধ্যে দিলদার আহমেদ সেলিমকে ২৭ নভেম্বর, গুলজার আহমেদকে ২৮ নভেম্বর এবং আজাদ আহমেদকে ১ ডিসেম্বর হাজির হতে বলা হয়েছিল। এরপরও তারা দুদকে হাজির হননি।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৫ জুন আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাইকে তাদের সম্পদের হিসাব আলাদাভাবে জমা দিতে নোটিশ পাঠিয়েছিল দুদক। এরপর নির্ধারিত সময়ে একই বছরের ২ জুলাই তারা দুদকের সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। পরে সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই করে সম্প্রতি গুলজার আহমেদের নামে ঢাকায় একাধিক বাড়ি, প্লট ও গাড়িসহ প্রায় ৭০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। এরমধ্যে তার ৩০ কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জন ও ভোগ দখলে রেখেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
২০১৭ সালের ৮ জুন ও ১২ আগস্ট যথাক্রমে আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ১০ মামলা দায়ের করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা।
দুদক সূত্রে জানা যায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২০১৭ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শোরুম থেকে অবৈধ ১৫ মণ স্বর্ণ ও হীরার অলঙ্কার জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ওই স্বর্ণ কেলেঙ্কারির পর প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনজনিত দুর্নীতির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে শুল্ক গোয়েন্দা থেকে চিঠি পাঠানোর পর দুদকে কার্যক্রম শুরু হয়। দুদকের অনুসন্ধান শুরুর ৬ বছর ওই মামলা দায়ের করলো দুদক।
আরএম/এসএম