পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি

পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি বলেছেন, একাত্তরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর পাকিস্তান সরকারের নির্যাতন চালিয়েছে। বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য দেশটির সরকারের ওপর জনগণের চাপ প্রয়োগ করা উচিত।

সোমবার (২৯ মার্চ) বেলজিয়ামে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: গণতন্ত্রের প্রতীক’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি এ মন্তব্য করেছেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত পাকিস্তানি এই সাবেক দূত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্কলার। তিনি বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসির শীর্ষস্থানীয় থিংক ট্যাংক হাডসন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পরিচালক।

পাকিস্তানের সাবেক এই দূত বলেন, ‘আমি মনে করি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে চালানো সব ধরনের নৃশংসতার জন্য দেশটির জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা চাওয়া উচিত। এ জন্য পাকিস্তান সরকারের ওপর দেশটির জনগণের চাপ প্রয়োগ করা উচিত। ক্ষমা প্রার্থনা হবে সবচেয়ে সৌজন্যমূলক বিষয়।’

বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা উল্লেখ করে হুসেইন হক্কানি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিই নন, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বিশ্ব ইতিহাসের এক মহান নেতা ও বিশ্বজুড়ে ২০ শতকের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন প্রবাদপ্রতিম নেতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন ম্যান্ডেলার মতো মহান ব্যক্তিদের কাতারে।’

১৯৭০ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে পাকিস্তানের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে সোনার ডিম দেওয়া রাজহাঁস। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগ অংশ পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) থেকে অর্জিত হতো। পাকিস্তানের সামন্তবাদী শাসকরা কখনোই বাঙালিদের নিজেদের সমতুল্য মনে করেনি। ফলে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের বিজয় ও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরেও শাসকরা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি।’

বাংলাদেশ বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার একটি সফল দেশ উল্লেখ করে হুসেইন হক্কানি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল ও আর্থ-সামাজিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল একটি দেশ। আজকের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু ও তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আশা করা হয়েছিল যে, একাত্তরে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর চালানো জঘন্যতম গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে। যদিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেষ মুহূর্তে একটি অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। তবে দুঃখজনকভাবে তিনি ১৯৭১ সালে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাননি।’

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত সালেহ বলেন, ২০২১ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় বছর। কারণ এ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশি দূত আশা করেন, রাষ্ট্রদূত হাক্কানির বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বুদ্ধিজীবী ও গবেষকগণকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

এনআই/ওএফ