নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারকে ‘অ্যাপ্রিশিয়েট’ করেছে ইইউ
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার বিষয়টি ‘অ্যাপ্রিশিয়েট’ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে বিষয়টি উঠে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
বৈঠক সূত্র জানায়, এতদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যে ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছিল, সেটি ছেড়ে দেওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশংসা করেছেন তারা। বিষয়টি খুবই ‘অ্যাপ্রিশিয়েট’ করেছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান ইইএএসর জ্যেষ্ঠ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সেলোরি রিকার্ডোর নেতৃত্বে চারজন সদস্য এ বৈঠকে অংশে নেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দিমিত্রা লোননাউ, আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিশ্চিনা দোস রামোস আলভিস, ইইউ ডেলিগেশনের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স ড. ব্রেন্ড স্পানিয়ার, ইইউ ডেলিগেশনের পরিটিক্যাল অফিসার সেবাসটেইন রিগার ব্রাউন।
বিজ্ঞাপন
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের পরিবেশ, বাংলাদেশের নির্বাচনী আইন, নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগের কাছে জানতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এজন্য তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের অপরিহার্য বিষয়গুলোতে হাত দিয়েছে এবং তা সংস্কার করেছে। এর মধ্যে আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার থেকে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ক্ষমতা এতদিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছিল, সেটিও ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রতিনিধিদলকে জানান।
সফররত প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে মোট ৬৬টি আইন সংস্কার হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগই ৫৫টি করেছে। এগুলোর মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্বাধীন, টেকসই করা এবং নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনের আমূল পরিবর্তন করা রয়েছে। এর মধ্যে এক-এগারোর সরকার ৫টি এবং বাকি সব সরকার মিলে ৬টি আইন সংস্কার করেছে। একটি ফানডামেন্টাল নির্বাচনের জন্য করণীয় সব করেছে আওয়ামী লীগ। গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সরকারের নেওয়া এসব উদ্যোগের প্রশংসা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল।
এ সময় বাংলাদেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, আইনি ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি নির্বাচন দেখতে চান বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল জানায়।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল জানায়, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্ভব। বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে।
বৈঠকে বিরোধী দল বা বিএনপি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে বাস্তবতায় একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল, বাংলাদেশে এখন সেই ব্যবস্থা নেই। কাজেই বর্তমান বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা নেই।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, পৃথিবীর কোথাও নিখুঁত নির্বাচন ব্যবস্থা নেই। সব দেশ যে সুইজারল্যান্ড হবে, সেটা মনে করারও কারণ নেই। পাশাপাশি বাংলাদেশের বাস্তবতা তারা উপলব্ধি করেন। তবে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় তারা আশ্বস্ত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পর্ক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জহির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এমএসআই/এসকেডি