রাজধানীর হাজারীবাগের জমি ব্যবসায়ী এখলাস হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী লেদার মনিরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেপ্তাররা হলেন- আ. রহমান ওরফে রহমান কাল্লু, মো. এসহাক, ফয়সাল, মনির হোসেন ওরফে লেদার মনির ওরফে কোম্পানি মনির ও ঝন্টু মোল্লা।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) থেকে শুক্রবার (২১ জুলাই) পর্যন্ত রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, বিমানবন্দর এবং কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় মনিরের কাছে থেকে দুটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, একটি মোবাইল, ২২ হাজার বাংলাদেশি টাকা ও পাঁচ হাজার ভারতীয় রুপি জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, কামরাঙ্গীরচরের একটি জমি সংক্রান্ত বিরোধ থেকে ২০ লাখ টাকার চুক্তিতে ভারাটে খুনি দিয়ে এখলাসকে হত্যা করা হয়। আর এতে ব্যবহার করা হয় কাটআউট পদ্ধতি। এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন লেদার মনির। একসময় হাজারীবাগ এলাকায় ২০ টাকা দিনমজুর হিসেবে ট্যানারির চামড়া পরিষ্কার করতেন তিনি। এখন হাজারীবাগে চারটি ট্যানারির মালিক মনির। এছাড়া মনির আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্ত্র ব্যবসা থেকে বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত।

শনিবার (২২ জুলাই) দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন আর রশীদ এসব তথ্য জানান। 

মোহাম্মদ হারুন আর রশীদ বলেন, এখলাসকে খুনের জন্য উপযুক্ত সময় হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ঈদুল আজহার আগের রাত। সেই রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন এখলাস। নিখোঁজের দুদিনের মাথায় কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধ থেকে তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখলাস খুনের পর এ ঘটনায় ১ জুলাই কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি মামলা হয়। এই ঘটনায় পর্যায়ক্রমে মূল পরিকল্পনাকারী মনির হোসেন ওরফে লেদার মনির ওরফে কোম্পানি মনিরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা এড়াতে মনির জঙ্গিদের মতো ‘কাটআউট’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। গত ২০ জুলাই বিমানবন্দর এলাকা থেকে পাসপোর্টসহ গ্রেপ্তার হয় ঝন্টু মোল্লা। সে মূলত কোম্পানি মনিরের ক্যাশিয়ার। সে ৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছে। তার দেওয়া তথ্যমতে ডিবি এলিফ্যান্ট রোড ও কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এখলাসকে হত্যাকারী আ. রহমান ওরফে রহমান কাল্লুকে এবং সমন্বয়কারী মো. এসহাককে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া ডিবির অপর দুটি টিম মাগুরা জেলায় এবং যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে হত্যায় জড়িত ফয়সাল এবং মূল পরিকল্পনাকারী মনিরকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় মনিরের কাছে দুটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, একটি মোবাইল, ২২ হাজার বাংলাদেশি টাকা, আর পাঁচ হাজার ভারতীয় রুপি জব্দ করা হয়। মনিরের পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় গত ১৫ জুলাই সকালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে সে কলকাতায় পালিয়ে যায়। পরে অবৈধভাবে দেশে ঢুকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের মোটিভের বিষয়টি তিনি বলেন, হাজারীবাগ এবং সাভার এলাকায় একাধিক ট্যানারি কারখানার মালিক কোম্পানি মনির একজন ভূমিদস্যু এবং দালালও বটে। বিভিন্ন সময়ে সে ভিকটিম এখলাসকে দিয়ে জায়গা দখল এবং ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করিয়েছে। কামরাঙ্গীরচর থানাধীন সিএস ২২ দাগের একটি বড় জমিতে নিহত ভিকটিম এখলাসের ৪০ শতক জায়গা আছে যার অধিগ্রহণ মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। কোম্পানি মনির এই জায়গাটি নিজের দখলে নিয়ে সমুদয় অধিগ্রহণ মূল্য গ্রাস করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এই চেষ্টা রোধ করতে ভিকটিম এখলাস একাধিক মামলা দায়েরসহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ করেছে। নানা ফন্দি ফিকির করে ব্যর্থ হয়ে কোম্পানি মনির এই হত্যার পথ বেছে নেয়।

এমএসি/জেডএস