মাস দেড়েক আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি সেমি পাকা ঘর বরাদ্দ পান হাসিনা বেগম। ঘরটিতে বসবাস শুরুর সুযোগ পেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দলিল বুঝে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। প্রহর গুনছিলেন কবে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বুধবার (৯ আগস্ট) হাতে পেলেন কাঙ্ক্ষিত সেই দলিল। দলিলে নিজের নাম দেখে আবেগাপ্লুত হাসিনা। পাকা ঘরসহ দলিল বুঝে পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে হাসিনা বলেন, ‌‘কখনও ভাবি নাই একটা পাকা ঘর হবে। এটা ছিল স্বপ্নের মতো। জমি পাইছি, ঘর পাইছি, দলিল পাইছি। আমরা খুব খুশি।’

মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীন সব অসহায় মানুষকে নতুন ঘর উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এবার সারা দেশে ২২ হাজার ১০১টি সেমি পাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ নোয়াখালী জেলায় ৪১৮ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫০টি পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর হস্তান্তর করা হয়।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টার পর আমানউল্লাহপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশের এলাকাজুড়ে ছিল উৎসের আমেজ। নতুন ঘর পাওয়া নারীদের পরনে ছিল টিয়া রঙের শাড়ি। আর তাদের স্বামী কিংবা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরতরা পুরুষরা পরেছেন লাল-সবুজ রঙের পাঞ্জাবি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রবেশ মুখের সামনে তৈরি করা সামিয়ানার নিচে পুনর্বাসিতরা অপেক্ষা করছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জন্য। কখন স্ক্রিনে দেখা যাবে সেই মানুষটিকে, যে তাদের ঘর উপহার দিয়েছেন। ঘড়ির কাঁটা ঠিক ১০টা। প্রায় ১০ মিনিট বিভিন্ন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্ক্রিনে দেখা যায় সরকারপ্রধানকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা বক্তব্য শুরু করেন। ভূমিহীন-গৃহহীন সব অসহায় মানুষকে নতুন ঘর উপহার দেওয়ার সংগ্রামের কথা স্মরণ করেন তিনি। শোকাবহ আগস্টে নিজের পরিবার হারানোসহ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলেন সরকারপ্রধান। প্রায় ৩০ মিনিট চলে বক্তব্য। এরপর একে একে পাবনা, খুলনা ও নোয়াখালীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঘর পাওয়াদের অনুভূতি শুনেন। তাদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। 

বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জাহেরাকে কথা বলার সুযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ। ঘর পাওয়া জাহেরা তার অনুভূতি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে তার ঘরে আমন্ত্রণ জানান।

ঘর পাওয়া হালিমা আক্তার ঢাকা পোস্টের সঙ্গে অনুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,‌ ‘রাস্তার পাশে থাকতাম। প্রধানমন্ত্রী একটা ঠাঁই করে দিছে। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’

শাহিনা আক্তার বলেন, ‘স্বামী প্রতিবন্ধী। জায়গা-জমি কিছুই ছিল না। সরকার ঘর দিছে। শেখের বেটিরে আল্লা বাঁচাইয়া রাখুক।’

আমানউল্লাহপুরে পুনর্বাসিতদের সবার ঘরে ঘরে যেন ঈদ আনন্দ। এ আনন্দের অংশীদার হয়েছে আমানউল্লাহপুর কাচিহাটা গ্রামের বাসিন্দারাও। আশ্রয়ণের ঘর হস্তান্তরের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছে দূরদূরান্তের লোকজনও।

কাচিহাটা গ্রামের বাসিন্দা কুদ্দুস শিকদার বলেন, ‘যাদের ঘর ছিল না তারা সবাই অসহায় ছিল। রাস্তা থাকত, উদ্ধাস্তু। এখন তারা জমি-ঘর সব পাইছে। তাদের আনন্দ দেখে আমাদেরও আনন্দ লাগছে।’\

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় আজ সারাদেশে ২২ হাজার ১০১টি ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে যে কয়টি উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে একটি বেগমগঞ্জ উপজেলা। 

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, আজ পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পের এলাকায় আনন্দের জোয়ার বইছে। বাসিন্দারা যে যার ঘর সাজিয়েছে। তাদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। তারা প্রকৃত ভূমিহীন তাদেরকেই আমরা ঘর দিয়েছি। তাদের জন্য তৈরি ঘরে যেসব ব্যবস্থা করা হয়েছে, তারা খুব ভালোভাবে বসবাস করতে পারবেন।

১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন জা‌তির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিবুর রহমান। তার দেখা‌নো প‌থে কন্যা শেখ হা‌সিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়ি ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আর পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জনকে।

এনআই/এসকেডি