নিউ মার্কেট ফুট ওভার ব্রিজে মানুষের ভিড়

সারাদেশে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রাণহানি ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ১৮ দফা নির্দেশনা। এতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা থাকলেও রাজধানীর অনেক এলাকায় তা উপেক্ষিত হচ্ছে।

হাট-বাজার, মার্কেট ও শপিং মলে যেন স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। সামাজিক দূরত্ব, সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। গণজমায়েত নিষিদ্ধ থাকলেও তা এখনও তা দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। 

শনিবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিনে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম। কিছু সময় পর পর মাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আহ্বান জানানো হলেও তার তোয়াক্কা করছেন না কেউই। অনেকের মাস্ক নেমে এসেছে থুতনির নিচে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছেন না কেউই।

এদিকে নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারে আসা ক্রেতাদের অনেকের মুখে মাস্ক থাকলেও বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক ছিল না। মুখে মাস্ক না থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলে সবজি বিক্রেতা শাহিন আলম বলেন, মাস্ক পরে গরমের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। তাছাড়া ক্রেতার সঙ্গে সবজির দরদাম করা যায় না। তাই বাধ্য হয়েই মাস্ক খুলে বসতে হয়।

 নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে মাছ বিক্রেতার মুখে নেই মাস্ক

একই কথা শোনালেন মাছ বিক্রেতা আলামিন। বললেন, আমরা গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খাই। ক্রেতাকে না ডাকলে মাছ বিক্রি হবে না। আর মাস্ক পরে বেশি জোরে কথা বলা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে মাস্ক খুলেই বেচাকেনা করছি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং মুখে মাস্ক রেখে বাজারে অবস্থান করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কেউ না মানলে সেই দায়ভার ব্যক্তিগত।

একই রকম অবস্থা দেখা গেল নীলক্ষেতের বাকুশাহ মার্কেট ও বইয়ের দোকানগুলোতেও। মানুষের উপস্থিতি আর ভিড়ের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি বলতে কিছু রয়েছে কি না সেটিই বুঝা যাচ্ছিল না। কেন মাস্ক পরেননি- এমন প্রশ্নে মার্কেটের বই ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া পকেট থেকে মাস্ক বের করে দেখিয়ে বললেন, মাস্ক সঙ্গেই আছে। সময়মতো পরে নেবো।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নীলক্ষেত মোড় থেকে ফার্মগেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া হিউম্যান হলারগুলোতেও ছিল না অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের চিহ্ন। চালক জানালেন, যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে চান না। তাই বাধ্য হয়েই সরকারের নির্দেশনার পরও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করেই চলতে হচ্ছে।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাঝখানে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার একটা প্রবণতা চলে এসেছিল, যার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে। বিষয়টি অনেকেই ছোট করে দেখছেন। কিন্তু সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প কিছু নেই। এখনও যদি মানুষ সচেতন হয় তবে আক্রান্তের সংখ্যা এবং প্রাণহানি দুটোই কমিয়ে আনা সম্ভব।

আরএইচটি/আরএইচ