ফাইল ছবি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশে টিকা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৩৪ জন। এদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ৯৩৭ জনের শরীরে। পাশাপাশি টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৬৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৮ জন।

শনিবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ৩৯ হাজার ৮৪৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২২ হাজার ৭৫৯ জন ও নারী ১৭ হাজার ৮৪ জন। এর মধ্যে মাত্র একজনের শরীরে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (জ্বর, টিকা দেওয়ার স্থান লাল হওয়া) দেখা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মোট ভ্যাকসিন নেওয়াদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ভ্যাকসিন নিয়েছেন দুই লাখ ৬৭ হাজার ১১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৪৬৭ জন, রংপুর বিভাগে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪৫ জন, খুলনা বিভাগে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৮২৮ জন, বরিশাল বিভাগে ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৭ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ লাখ ৮১ হাজার ৯৭৯ জন।

গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথম দিন টিকা দেওয়া হয় ২৬ জনকে। করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালে মোট ৫৪১ ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হয়। আর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। এ দিনে সারাদেশে টিকা নেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ৮৫৭ জন এবং নারী সাত হাজার ৩০৩ জন। 

এদিকে টিকাদান কার্যক্রমের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। সংক্রমণ রোধে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। এমন সিদ্ধান্তের দিনে খবর এলো করোনায় আরও ৫৮ জনের মৃত্যুর। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল নয় হাজার ২১৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৬৮৩ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ছয় লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জনে। শনিবার (৩ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। গত বছরের শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই জারি করা হয় লকডাউন। এতে থমকে যায় দেশগুলোর অর্থনীতির চাকা। বাংলাদেশেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে জেলাভিত্তিক চলাচল সীমিত করা হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে বিভিন্ন দেশ শর্তসাপেক্ষে লকডাউন তুলে নেয়। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রতিষেধক টিকার প্রয়োগ শুরু হয়। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে।

৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন : ওবায়দুল কাদের
এদিকে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার। শনিবার (৩ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ (শনিবার) সন্ধ্যার মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে। শিল্প কলকারখানা শর্তসাপেক্ষ চালু থাকতে পারে। 

যারা কথা দিয়ে কথা না রেখে দূরপাল্লায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে, তাদের উদ্দেশে কাদের বলেন, দুর্যোগের মধ্যে জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, রমজান এলেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।অহেতুক মূল্যবৃদ্ধি ও মজুদদারি নিয়ন্ত্রণে সরকার সতর্ক রয়েছে। 

পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ
এদিকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটনকেন্দ্র। বাতিল করা হচ্ছে হোটেল-মোটেলে আগাম নেওয়া বুকিং। পাশাপাশি নতুন বুকিংও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সরকার থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

বন্ধ থাকবে দোকানপাট-শপিংমল
লকডাউনের সময় দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুর রহমান টিপু এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনের বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের মানতেই হবে। কারণ দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন ভালো না। তাই আগামী ৫ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। তবে আমাদের দাবি এই লকডাউন এক সপ্তাহের বেশি যেন না বাড়ে।
 
বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অ্যাকাউন্ট) শেখ আব্দুল আলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবেই আমরা চলব। শপিংমল এক সপ্তাহ বন্ধ রাখতে বললে আমরা বন্ধ রাখব।    

পোশাক ও শিল্পকারখানাগুলো খোলা থাকবে
লকডাউনের বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, লকডাউনে জরুরি সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোই শুধু খোলা থাকবে। এছাড়া পোশাক ও শিল্পকারখানাগুলো খোলা থাকবে। কারণ কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের বাড়িতে ফেরার বিষয় থাকে। এতে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়বে। তবে কারখানায় শ্রমিকদের একাধিক শিফটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে।

টিআই/এইচকে