বাড্ডা লিংক রোডের গুদারাঘাট সংলগ্ন বাজারের ছবি/ ঢাকা পোস্ট

অফিস শেষ করে গুলশান বাড্ডা লিংক রোডের গুদারাঘাট সংলগ্ন বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী নূরূন নাহীদ মোহম্মাদ হাবীব। কাঁচাবাজার শেষ করে ঢুকেছেন মুরগির বাজারে। বাজারে ঢুকে তো নাহীদের চোখ কপালে উঠেছে। পুরো বাজারে মুরগির খাঁচাতে একটিও মুরগি নেই।

পুরো বাজারে কোনো মুরগি নেই কেন? ক্রেতা নাহীদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুরগির দোকানী নিজাম উদ্দিন বলেন, লকডাউনের ঘোষণার পর সবাই ২/৪টি করে মুরগি কিনে নিয়ে গেছে। তাই বাজারের কোনো দোকানে আর মুরগি নেই।

শনিবার (৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার পর গুদারাঘাট সংলগ্ন বাজারের দৃশ্য এটি। এমন পরিস্থিতিতে মুরগি কিনতে আসা নূরূন নাহীদ মোহম্মাদ হাবীব ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বাসায় আত্মীয় এসেছেন। মনে করলাম অফিস শেষ করে বাজারসহ মুরগি কিনে নিয়ে যাব। কী অদ্ভুত ব্যাপার, বাজারে এসে দেখলাম বাজারের খাঁচাতে একটিও মুরগি নেই। হুজুগে মানুষ লকডাউনের কথা শুনেই মুরগির খাঁচা ফাঁকা করে দিয়েছে।

আজ (শনিবার) মুরগির দাম কেমন ছিল জানতে চাইলে মুরগি বিক্রেতারা জানান, প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়, সোনালী ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, কক মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজিতে।

আজ দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে জানান, করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে। তবে শিল্প-কলকারখানা শর্তসাপেক্ষ চালু থাকতে পারে। বন্ধ থাকবে দোকানপাট-শপিংমল। 

লকডাউনে দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুর রহমান টিপু এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনের বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের মানতেই হবে। কারণ দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন ভালো না। তাই আগামী ৫ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। তবে আমাদের দাবি এই লকডাউন এক সপ্তাহের বেশি যেন না বাড়ে।

এদিকে লকডাউনের কারণে কর্ম হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন-মধ্যবিত্তের পরিবারের ভরণ-পোষণ, বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি বিলসহ সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভাড়াটিয়া পরিষদ।

শনিবার (৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, গত বছর লকডাউনের ফলে কেমন মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল তা আমরা সবাই দেখেছি। সেই লকডাউনে যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের অনেকে এখনও চাকরি পাননি। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা দাবি জানানোর পরও ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ভাড়া, দোকান ভাড়া মওকুফ করা হয়নি। খুবই স্বল্পসংখ্যক বাড়িওয়ালা উদারতার পরিচয় দিয়ে ভাড়া মওকুফ করেছিলেন। আগের লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই পুনরায় লকডাউনের ফলে দেশের নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিঃস্ব হয়ে যাবে।

ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি আরও বলেন, আমরা সরকারকে লকডাউনের শর্তগুলো ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নেমে সব কার্যক্রম কীভাবে চালানো যায় সে বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় মানুষ করোনায় নয়, না খেয়ে মারা যাবে।

এএসএস/এইচকে