সংসদে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ফাইল ছবি

হেফাজতের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপি জড়িত— দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে বাধা দিতে হেফাজতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বিএনপি। প্রথমেই আমরা দেখলাম বিএনপি তাদের সমর্থন দিল। বিএনপি-জামায়াত জোট কীভাবে সমর্থন দিল, সেটাই আমার প্রশ্ন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন, সেখানে তাদের আপত্তি। বিএনপির কর্মকাণ্ডে অবাক লাগে। জ্বালাও-পোড়াও যতকিছু করতে হবে তার পরামর্শ হেফাজতকে দিয়েছে তারা। পরে তাদের কর্মকাণ্ডে সমর্থনও দিয়েছে।

রোববার (৪ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেনে সংসদ নেতা। তিনি বলেন, কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মের বদনাম হবে, এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। আমি বলব, দেশবাসী যেন একটু ধৈর্য ধরেন। সবাইকে ধৈর্য ধরে এগোতে হবে। ধর্মের নাম নিয়ে অধর্মের কাজ জনগণ কখনও মেনে নেবে না। জনগণ কখনও সহ্য করবে না। পবিত্র ধর্মকে কেউ অসম্মান করবে, সেটা আমরা চাই না। এ ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান পালন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশি অতিথি এসেছেন। অনেকে বার্তা দিয়েছেন। বাংলাদেশ এত বড় সম্মান পাচ্ছে, তারা খুশি হতে পারলেন না। ২৬ মার্চ নরেন্দ্র মোদি আসবেন। তাকে আসতে দেওয়া যাবে না। বাধা দেওয়া, কেন; আমার এ প্রশ্ন। আজ হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দেয়। তারা কি দেওবন্দে যান না শিক্ষাগ্রহণ করতে? তারা এসব ঘটনা যদি ঘটান তাহলে উচ্চ শিক্ষায় দেওবন্দে যাবেন কীভাবে? সেটা কি একবারও চিন্তা করেছে? আমরা তো কওমি মাদরাসার সনদ দিচ্ছি। তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করছি। কারিকুলাম ঠিক করে দিচ্ছি। যাতে তারা দেশে-বিদেশে চাকরি পান, সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তারপরও তারা তাণ্ডবটা কেন ঘটাল?

তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুরু হলো হেফাজতের তাণ্ডব। হেফাজত তো একা নয়। তাদের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপিও জড়িত। হেফাজতের সবাই যে এর সঙ্গে জড়িত তা কিন্তু নয়।

২৬ মার্চ এবং তার আগের ও পরের ঘটনার কিছু স্থিরচিত্র সংসদে পাওয়ার পয়েন্টে দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ হেফাজত গুজব ছড়াল যে বায়তুল মোকাররমে মানুষ মারা হয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। ২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে সহিংসতা চালালো। ২৭ ও ২৮ তারিখ (মার্চ) হেফাজতের পক্ষে বিএনপি-জামায়াতের বিবৃতি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক অংশ। ২৮ মার্চ হরতাল ডেকে বিনা উস্কানিতে সারাদেশে তাণ্ডব চালায়। আওয়ামী লীগ অফিস, দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, সরকারি অফিস-আদালত, পরিবহনে হামলা, ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়। তারা কোন ধরনের ধর্মে বিশ্বাস করে যে কুরআন শরীফ পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয়। এভাবে তারা বিভিন্ন জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। সেই ধর্মের নামে জ্বালাও-পোড়াও কেন? ২০১৩ সালেও আমরা বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও দেখেছি।

হেফাজতের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনোকিছু হলেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অফিস ও বাসায় আগুন দেওয়া হয়। আগুন নিয়ে খেলছে তারা। এক ঘরে আগুন লাগলে তা অন্য ঘরেও চলে যেতে পারে। সেটা কি তাদের হিসাবে নেই? আজ রেলস্টেশন থেকে শুরু করে ভূমি অফিস, ডিসি অফিস— সব জায়গায় আগুন দিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের মাদরাসা, তাদের বাড়িঘর সেগুলোতে যদি আগুন লাগে তখন তারা কী করবে? জনগণ কি বসে বসে এগুলো সহ্য করবে? তারা তো সহ্য করবে না।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশ কেন ধৈর্য দেখিয়েছে, এ প্রশ্ন সংসদে এসেছে। আমরা ধৈর্য দেখিয়েছি কারণ, এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য। সংঘাতে সংঘাত বাড়ে, আমরা তা চাইনি। সুবর্ণজয়ন্তী আমরা ভালোবাসার সঙ্গে উদযাপন করতে চেয়েছি। যারা করেছে (তাণ্ডব চালিয়েছে) দেশবাসী তাদের বিচার করবে। আইন তার আপন গতিতে চলবে।

তিনি বলেন, একজন মুসলমান হয়ে আরেক মুসলমানের জানমাল রক্ষা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু হেফাজতের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত তাদের মদদদাতা। সব মুসলমানের জন্য তারা লজ্জা এনে দিচ্ছে। পবিত্র ধর্মকে তারা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাদের কর্মকাণ্ডে বহু মানুষের জীবন গেছে। ২৬ মার্চও অনেক মানুষের জীবন গেছে। এজন্য দায়ী তারা। মুখে ধর্মের কথা বলবেন, কাজ করবেন অধর্মের, তা গ্রহণযোগ্য নয়। এদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করে। সেটাই করবে। যার যার ধর্ম সে পালন করবে। কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মে বদনাম হবে, এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।

রাজিব গান্ধীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াও যান। সেখানে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি ইয়াসির আরাফাত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখে হাত বাড়ালেন। খালেদা জিয়া হাত গুটিয়ে বসে থাকলেন। কিন্তু সেই খালেদা জিয়াকে দেখলাম মোদি সাহেবের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে। সেই হাত যেন আর ছাড়েন না। তার সঙ্গে টেলিফোনে সেই খিল খিল করা হাসির আওয়াজ। সেটাও সকলের কানে বাজে। আবার সুবর্ণজয়ন্তীতে যখন মোদি আসবেন সেখানে বাধা দেওয়া; আবার হেফাজতের সঙ্গে হাত মেলানো কেন? এ প্রশ্নের জবাব কোথায় পাব, জানি না। তবে এ প্রশ্ন রেখে গেলাম।

এইউএ/এমএআর/জেএস