ডাবল মাস্ক, টুপি পরেও রক্ষা পাননি দুই ভাই
প্রাইভেট কার নিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বর দিয়ে যাচ্ছিলেন। গাড়িটি থামিয়ে গ্লাস নিচে নামাতে বললেন ম্যাজিস্ট্রেট। গাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তি শার্ট-প্যান্ট পরা, চোখে ছিল সানগ্লাস। ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞেস করলেন, ‘গাড়িতে করে কোথায় যাচ্ছেন?’
ওই ব্যক্তি জবাবে বললেন, ‘পাখির খাবার শেষ পর্যায়ে, খাবার আনতে’। ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, ‘লকডাউনের কথা বলেতো সময় দেওয়া হয়েছিল, তখন কী করেছেন?’ উত্তর দিলেন, ‘অন্যকাজ ছিল। তাই বের হতে পারিনি’। এরপরই তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হলো।
বিজ্ঞাপন
কঠোর নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দেশে করোনার প্রকোপ ঠেকাতে সরকারের দেওয়া কঠোর নিষেধাজ্ঞা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মতিঝিলে চলছে র্যাবের অভিযান। অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
দেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা চলা সত্ত্বেও অনেককেই অকারণে ঘোরাফেরা করতে দেখেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। বেশ কয়েকজনকে করা হয়েছে জরিমানা; সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
বিজ্ঞাপন
অভিযানে একজনকে পাওয়া যায়, যিনি আজ ব্যাংকে যাচ্ছেন ডেবিট কার্ড তুলতে। অথচ ব্যাংক থেকে তাকে আরও সপ্তাহখানেক আগে ডেবিট কার্ড নিয়ে যেতে অনুরোধ করা হয়েছিল।
অভিযানের এক পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হয় একজনের। প্রাইভেট কারে করে মধ্যবয়স্ক দুইভাই মুখে ডাবল মাস্ক পরে যাচ্ছিলেন তাদের নির্মাণাধীন সাইটের মিস্ত্রীকে বিলের টাকা পরিশোধ করতে। তারা গাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসেননি বলে প্রতিজনকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তবে দুই ভাইয়ের মধ্যে মিতুল একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে তর্কে জড়ালে তার জরিমানা দ্বিগুণ করা হয়। অনাদায়ে আটদিন তাকে জেলে রাখার নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে মিতুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি ড্রাইভিং সিটে ছিলাম, পাশে ভাই বসা ছিল। দুজনের ডাবল মাস্ক, টুপি পরা ছিল। এরপরও সামাজিক দুরত্ব বজায় না থাকার অজুহাতে আমাদের মামলা দেওয়া হলো।’
অভিযানে টঙ্গী থেকে মোটরসাইকেলে করে শরীয়তপুরের উদ্দেশে যাওয়া আবুল কালামকেও জরিমানা করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম আবু কালাম। তিনি টঙ্গীতে ফুটপাতে পুরাতন কাপড়চোপড় বিক্রি করেন। হেলমেট থাকায় মাস্ক পরেননি তিনি। তাকে জরিমানা করা হয় দুই হাজার টাকা।
আবু কালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি ফুটপাতে দোকান করি। লকডাউনে দোকান করতে দেয় না বলে বাড়ি ফিরছিলাম। কিন্তু হেলমেটের কারণে আমি মাস্ক পরিনি। তাই বলে আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করল। এটা আমার জন্য অনেক বেশি হয়ে গেল।’
শরীফুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী যাচ্ছিলেন বিআরটিএ-এর ইক্যুরিয়ার দফতরে। সেখানে ডিজিটাল নম্বর প্লেট নেবেন। তবে এই কাজটি ‘জরুরি’ মনে না হওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট তাকে এক হাজার টাকা অনাদায়ে সাত দিনের জেল দেন। তবে টাকা দিয়েই মুক্ত হন ওই ব্যবসায়ী।
র্যাবের দুই ঘণ্টাব্যপী অভিযানে ২৫ জনকে ১২ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অভিযানের সময় প্রায় ৭৫০-৮০০ মাস্ক বিতরণ করেছে বলেও দাবি করেছে র্যাব।
অভিযানের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যারা মাস্ক না পরে বের হয়েছেন, সামাজিক দূরত্ব না মেনে চলছেন- তাদের সচেতন করার পাশাপাশি জরিমানা করা হয়েছে। অনেকেই লকডাউনে বিনা কারণে অথবা জরুরি প্রয়োজন ছাড়াই বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। তাদের সচেতন করা হচ্ছে, যাতে তারা বাইরে না আসেন। জরিমানা করাই র্যাবের উদ্দেশ্য নয়, র্যাবের উদ্দেশ্য করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।’
করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের নতুন রেকর্ড
দেশে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় করোনা আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ২১৩ জন। একদিনে মৃত্যু ও শনাক্তের হিসাবে যা নতুন রেকর্ড।
এর আগে জুনের ৩০ তারিখে ৬৪ জন মারা যান, যা একদিনে মৃতের সংখ্যায় এতদিন সর্বোচ্চ ছিল। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই ৫০ জনের বেশি মারা যাচ্ছেন। আজ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৩৮৪ জনে। আর মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৫২ জনে।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৬৯ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮৩ জন।
এআর/এফআর