করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়েও পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ থেমে নেই। প্রকল্পের মাওয়া ও জাজিরা অংশ, নদীর অংশসহ বিভিন্ন অংশের নানা কাজে যুক্ত আছেন ২৫টি দেশের প্রায় ৭০০ নাগরিক। তাদের কেউ প্রকল্প কাজের প্রকৌশলী, কেউ পরামর্শক, কেউ তত্ত্বাবধায়ক, কেউবা শ্রমিক। 

করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের মধ্যেও বিদেশিরা কাজ করছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এসব নাগরিক চীন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ ও নদীশাসন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের। প্রকল্পে যুক্ত চীনের নাগরিকরা নিজ দেশ থেকে করোনার টিকা নিয়ে এসেছেন। বাকি দেশগুলোর বিদেশি নাগরিকরা আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে করোনারোধে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেবেন। এরই মধ্যে নিবন্ধনও শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের ১১ এপ্রিল সকালে ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয় শ্রীনগরে প্রকল্পে যুক্ত বিদেশিরা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে শুরু করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্পের কাজ থেমে নেই। জাজিরা ও মাওয়ায় গত বছর আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছিল। প্রতিটিতে ১২টি শয্যা আছে। সমসংখ্যক চিকিৎসক ও সেবিকাও আছেন। এখন মাওয়া প্রান্তের আইসোলেশন সেন্টারে আছেন একজন ব্যক্তি। তিনি প্রকল্পের পরামর্শক কাজে সংশ্লিষ্ট।

প্রকল্পের অগ্রগতি

সার্বিক ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ

মূল সেতু ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ

নদীশাসন ৮০ শতাংশ

প্রকল্পের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রকল্পের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি দরকার পড়লে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এককালীন ছুটি দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রকল্প কাজে যুক্ত হওয়ার আগে তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের অন্য আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রজব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন ২৫টি দেশের বিদেশি নাগরিক। তারা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন। প্রকল্প এলাকায় বাইরের কোনো অতিথিকেও এখন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নতুন করে যারা কাজে যোগ দেবেন, তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প এলাকায় আড়াই হাজার শ্রমিকের থাকার জন্য ডরমিটরি আছে। প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী, লক্ষণ-উপসর্গ থাকা কর্মীরা সহজেই নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছেন।

গত ডিসেম্বরে সেতুর সব স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়। এখন স্প্যানের ওপর সড়ক ও  ভেতরে রেলপথ নির্মাণের কাজ হচ্ছে। পদ্মায় মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ। মুল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ, নদীশাসন কাজ এগিয়েছে ৮০ শতাংশ। প্রকল্পে ব্যয় হবে সবমিলে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

পিএসডি/আরএইচ