বাসে বাসে তল্লাশি, আছে মোবাইল চেক করার অভিযোগও
সংগৃহীত ছবি
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা পঞ্চম দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলছে বুধবার (১৫ নভেম্বর) সকাল থেকে। অবরোধকে কেন্দ্র করে আগের রাতে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। যে কারণে সকাল থেকে রাজধানীর সড়কে গণপরিবহনের সংকট রয়েছে। তবে অবরোধে বাসে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা ঠেকাতে যাত্রীদের ছবি তুলে রাখার কথা জানিয়েছিল ডিএমপি। যার অংশ হিসেবে বিভিন্ন সড়কের মোড়ে বাস থামিয়ে তল্লাশি, যাত্রীদের ভিডিও ধারণ করছে পুলিশ। এছাড়া মোবাইল ফোন চেক করার অভিযোগও করেছেন অনেকে।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) সকাল থেকেই কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণিসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের এ কার্যক্রম দেখা গেছে। যা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজধানীবাসী।
বিজ্ঞাপন
কারওয়ান বাজার এলাকায় বাসের যাত্রী তাসনিম আলম সাকিব বলেন, আমি শাহবাগ এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ফার্মগেট থেকে বাসে উঠেছি। কারওয়ান বাজার আসতেই দেখি প্রতিটি বাস পুলিশ থামাচ্ছে এবং ভিডিও করছে। এক পর্যায়ে আমাদের বাসে এসেও সবার ভিডিও করা হয় এবং কয়েকজনের মোবাইল নিয়ে চেক করা হয়।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
সাকিব বলেন, একে তো অবরোধে গাড়ি কম, যাত্রীদের ভিড়। এরমধ্যে আবার পুলিশের তল্লাশি, সবমিলিয়ে বিরক্তিকর একটা অবস্থা। এটা কোনো ভালো সিস্টেম হতে পারে না।
রায়হান আহমেদ রাজু নামের এক যাত্রী বলেন, বাসে আগুন ঠেকানোর জন্য ডিএমপির নতুন নির্দেশনা রয়েছে। আগে দুর্বৃত্তরা আগুন দিতো পেট্রোল বোমা দিয়ে। এখন বাসে যাত্রী বেশে চোরাগোপ্তা আগুন দেয়। ছবি তুলে রাখলে বাসে আগুন দেওয়ার আগে তারা দুইবার ভাববে।
গাজী মোহাম্মদ নামক এক যাত্রী বলেন, পুলিশের উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে চেকিংয়ে কোনো আপত্তি নেই। তবে এক্ষেত্রে অনেকেই হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রত্যেকের মোবাইলে নিজস্ব কিছু গোপনীয়তা থাকতে পারে, সেই মোবাইল নিয়ে যদি তল্লাশি করা হয়, এটা মেনে নেওয়া যায় না।
ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হওয়া এক যাত্রী বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাসে আগুন দেওয়ার খবর পড়ছি। হাসপাতালে যাওয়া না লাগলে বের হতাম না বাইরে। তবে আগের অবরোধের তুলনায় বাস বেশি চলছে আজকে।
এবিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবরোধে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা ঠেকাতে যাত্রীদের ছবি নেওয়া হবে -এমনটা ডিএমপি থেকে আগেই নির্দেশনা ছিল। সেই অনুযায়ী পুলিশ কাজ করছে। তবে কোথাও মোবাইল ফোন চেক করে কোনো তল্লাশি করা হচ্ছে বলে বিষয়টি আমার জানা নেই। এমনটি হওয়ার কথা নয়।
এর আগে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা অবরোধে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধে যাত্রীদের ছবি তুলে রাখতে মালিক শ্রমিকদের নির্দেশনা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ। এবিষয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা মালিক শ্রমিকদের বলেছি তারা যেন যাত্রীদের ছবি তুলে রাখে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরাও চাইলে সন্দেহজনক গাড়িগুলোতে যাত্রীদের ছবি বা ভিডিও করতে পারবে। এছাড়াও আমরা আরও বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছি।
অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধে পুলিশের ১০ নির্দেশনা-
১. স্টপেজগুলোতে বাসের ও যাত্রীদের ছবি তুলে রাখতে হবে।
২. স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানামা করানো যাবে না।
৩. বাসে থাকা যাত্রীদের বাসের সহকারী সচেতন করবে।
৪. রাতে বিচ্ছিন্নভাবে বাস পার্কিং না করে কোনো উন্মুক্ত স্থানে একত্রে একাধিক বাস রেখে নিজস্ব প্রহরার মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. চালক ও সহকারী কখনই একই সঙ্গে গাড়ি রেখে খেতে বা বিশ্রামে যাবে না।
৬. ইতোমধ্যে নাশকতাকারীর তথ্য প্রদানকারীর জন্য বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
৭. সহকারী ছাড়া চালককে একা গাড়ি চালাতে দেওয়া যাবে না।
৮. রাতে গাড়ির মধ্যে ঘুমানো যাবে না, অন্তত একজনের মাধ্যমে হলেও পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. বাসের দুটো দরজা থাকলে পেছনের দরজা অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে এবং মালিক পক্ষ থেকে চালক ও সহকারীদের অবশ্যই নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনা দিতে হবে।
১০. এছাড়া যাত্রীদের জন্য সতর্কতামূলক স্টিকার বাসে লাগিয়ে দিতে হবে।
টিআই/জেডএস