প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো হবে প্যাকেটজাত খাবার / ছবি : বিদ্যানন্দের ফেসবুক পেইজ

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। মানবতার সেবায় ভূমিকা রাখায় এরই মধ্যে সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বিদ্যানন্দের মানবতার সেবা আরও বিস্তৃত হয়েছে। কুড়িয়েছে হাজারো মানুষের প্রশংসা। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে চাকরিহারা, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের সেবার পরিধি আরও বাড়াবে সংগঠনটি। 

বিদ্যানন্দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, করোনা মহামারিতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ পরিবারের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সাহায্যের মধ্যে রয়েছে রান্না করা খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া কঠোর বিধিনিষেধের সময় আরও এক লাখ পরিবারকে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা করছে তারা। ইতোমধ্যে বিধিনিষেধের সময় সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৪ এপ্রিল থেকে মাঠে নামার জন্য একাধিক টিমও গঠন করেছে বিদ্যানন্দ।

আরও পড়ুন : এবার দেশজুড়ে নাফিসার খাদ্য উপহার

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের হেড অব কমিউনিকেশন সালমান খান প্রতিষ্ঠানটির করোনাকালীন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানান।

সালমান খান বলেন, করোনার শুরু থেকেই যেসব মানুষ কর্মহীন হয়েছেন, যাদের পরিবারে আর্থিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তাদের পাশে এবং ছিন্নমূল মানুষের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। মহামারির শুরু থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আমরা রান্না করা খাবার বিতরণ করে আসছি। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছি। যা ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া বিধিনিষেধের মধ্যেও চলমান থাকবে। এছাড়া করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্যও কাজ করে যাচ্ছে বিদ্যানন্দ।

১৪ এপ্রিল থেকে আরও ১ লাখ মানুষকে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা করছে বিদ্যানন্দ

বিদ্যানন্দের রান্না করা খাবার

করোনা অতিমারির শুরুতে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়েন অসংখ্য মানুষ। ঘরে সংকট দেখা দেয় খাবারের। চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে হাত পাততে না পারায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাকতে হয় অনাহার বা অর্ধাহারে। এসব নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও বস্তির হাজারো মানুষকে রান্না করা খাবার বিতরণ করছে বিদ্যানন্দ। রান্না করা খাবার বিতরণ কর্মসূচির আওতায় নিজেদের দুইটি রান্না ঘর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে বিদ্যানন্দ। এর মধ্যে নিজেদের কর্মীদের মাধ্যমে ঢাকায় ২ হাজার পরিবারকে এবং চট্টগ্রামে ৩ হাজার পরিবারকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এই ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে কোনো পরিবারকে দুপুরে আবার কোনো পরিবারকে রাতের খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিদ্যানন্দ বলছে, গত বছর করোনার শুরু থেকেই তাদের এই কার্যক্রম চলছে। তবে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এই কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা হবে। এছাড়া সাহায্যপ্রাপ্ত পরিবারের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হবে। কেননা ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে আরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন।

করোনায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ

দেশে করোনা অতিমারির শুরু থেকে রান্না করা খাবারের পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রীও বিতরণ করে আসছে বিদ্যানন্দ। দেশের প্রত্যন্ত ও উপকূলীয় অঞ্চলে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের কর্মসূচি হাতে নেয় বিদ্যানন্দ। এই কর্মসূচির আওতায় করোনার কারণে যেসব মানুষ খাদ্য সামগ্রী কিনতে পারছেন না তাদের কাছে প্যাকেটজাত চাল, ময়দা, মসুর ডাল, চিনি, লবণ ও মসলা পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় বিদ্যানন্দের ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি সবচেয়ে বেশি চলছে। এ কাজে বিদ্যানন্দকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে বিদ্যানন্দ বলছে, করোনার শুরু থেকে এই কর্মসূচি চলমান থাকলেও পহেলা রমজান থেকে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির গতি আরও বাড়বে। ত্রাণ সামগ্রী জমা করার কাজ প্রায় শেষের দিকে। পহেলা রমজান থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মাধ্যমে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।

বিদ্যানন্দের করোনা হাসপাতাল

রান্না করা খাবার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি বিদ্যানন্দ করোনার চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্যও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এই কার্যক্রমের অধীনে চট্টগ্রামে অবস্থিত বিদ্যানন্দ মা ও শিশু হাসপাতালকে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে রূপান্তরিত করার কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। ৭০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটির কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে। কার্যক্রম শুরু হলে করোনা আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালটি থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের হেড অব কমিউনিকেশন সালমান খান বলেন, হাসপাতালটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। কার্যক্রম শুরু হলে ৭০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী একসঙ্গে হাসপাতালে আবাসিক ব্যবস্থায় চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন। এছাড়া বিদ্যানন্দের করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষাও করাতে পারবে মানুষ।

দুটি রান্না ঘর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার পরিবারের কাছে খাবার পৌঁছে দেয় বিদ্যানন্দ

করোনাকালে মানবতার সেবায় বিদ্যানন্দ

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের হেড অব কমিউনিকেশন সালমান খান বলেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছোট হওয়ায় করোনাকালে মানুষজনকে পর্যাপ্ত সাহায্য করতে পারছি না। তবে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ পরিবারকে আমরা সাহায্য করেছি। আরও এক লাখ পরিবারকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এছাড়া ফুড পান্ডার সঙ্গে মিলে তাদের অর্ডার থেকে বেঁচে যাওয়া খাবার আমরা রাজধানীর ছিন্নমূল ও ভাসমান মানুষের কাছে প্রতি রাতে পৌঁছে দিচ্ছি। আমরা চাই এই করোনা মহামারিতে যেন কোনো মানুষ অনাহারে দিন না কাটায়। আমাদের জায়গা থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, আমাদের মতো আরও মানুষ এগিয়ে আসলে করোনা পরিস্থিতিতে দেশে পরিবার নিয়ে কেউ না খেয়ে দিন কাটাবে না।

এমএসি/এসকেডি/জেএস