ঢাকা-১২ আসন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কিছু পোস্টার দেওয়ালে, রশিতেই নেই তৃণমূল বিএনপি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ১৮৫ (ঢাকা-১২) আসনে বৈধ প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। তবে তাদের মধ্যে ৩ প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার চোখে পড়লেও বাকি ৩ প্রার্থীর সড়কে দৃশ্যমান কোন প্রচারণা চোখে পড়েনি।
প্রচারণায় থাকা তিন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত খোরশেদ আলম খুশু (লাঙ্গল) এবং তৃণমূল বিএনপি মনোনীত মো. নাঈম হাসান (সোনালী আঁশ)।
বিজ্ঞাপন
তবে জাতীয় পার্টি ছাড়া বাকি দুই দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করা হয়েছে।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা-১২ আসনের মগবাজারের জাহা বক্স লেন, পেয়ারাবাগ, নয়াটোলা, নয়াটোল সড়ক, শাহসাব বাড়ী লেন, গ্রীণওয়ে রোড, চেয়ারম্যান গলি, আইডিয়াল পয়েন্ট, খেজুরগাছের গলি, মধুবাগ, মধুবাগ রোড, পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড, মীরবাগের অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে, তৃণমূল বিএনপি মনোনীত মো. নাঈম হাসানের কোনা পোস্টারই রশিতে ঝুলানো নেই। তার পোস্টারগুলো সাটানো হয়েছে গোশতের দোকানের সামনে, বৈদ্যুতিক পিলারে এবং মানুষের বাড়ি দেওয়ালে। যা নির্বাচনী আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। তবে তার কোনও নির্বাচনী প্রচারণা কেন্দ্র চোখে পড়েনি।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পোস্টার পুরো এলাকাজুড়ে রশিতে বেঁধে টানানো হয়েছে। তবে নয়াটোলা রোড়ের একটি জায়গায় ৫/৬টি পোস্টার একসঙ্গে দেওয়ালে সাঁটানো হয়েছে। এছাড়া মীরবাগের একটি গলিতে ১২টি পোস্টার একসঙ্গে দেওয়ালে সাঁটানো হয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে তার অসংখ্য ছোট ছোট নির্বাচনী ক্যাম্প দেখা গেছে। সেখানে সমর্থকরা বসে আড্ডা দিচ্ছেন। তবে কোনও স্পিকার বা মাইকের আওয়াজ শোনা যায়নি।
আর জাতীয় পার্টি মনোনীত খোরশেদ আলম খুশুর অসংখ্য পোস্টার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পোস্টারের পাশাপাশি ঝুলতে দেখা গেছে। পোস্টারের ক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি চোখে পড়েনি। তবে তার কোন নির্বাচনী ক্যাম্প দেখা যায়নি।
এছাড়া বাকি থাকা ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাহীন খান (আম), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. আতিকুর রহমান নাজিম (টেলিভিশন) এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ আব্দুল হাকিমের (মোমবাতি) কোনও পোস্টার চোখে পড়েনি।
আর মাত্র ১২ দিন পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইসির তফসিল অনুযায়ী আজ প্রচারণার অষ্টম দিন। প্রচারণা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
যা আছে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী আচরণবিধিতে
পোস্টার, লিফলেট বা পেইন্টিং; ভবনের দেওয়াল, গাছ, ল্যাম্পপোস্ট বা সরকারি স্থাপনা ও বাস-ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ, রিকশাসহ কোনও ধরনের যানবাহনে লাগানো যাবে না। অন্য প্রার্থীর পোস্টারের ওপরেও পোস্টার লাগানো যাবে না। দেয়াল বা যানবাহনে যেকোনো ধরনের ছবি আঁকাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
প্রার্থীদের মোটরসাইকেল শোডাউন কিংবা বাস-ট্রাক ও নৌকার মতো যানবাহন ব্যবহার করে মিছিল করতে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রচারণার বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণি ব্যবহার করা যাবে না। গেট বা তোরণ নির্মাণ করা যাবে না এবং চলাচলের পথে কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। ৪০০ বর্গফুটের বেশি স্থান নিয়ে কোনো প্যান্ডেল বা মঞ্চ করা যাবে না। বিদ্যুতের সাহায্যে কোনও ধরনের আলোকসজ্জা করা যাবে না। সড়ক, জনগণের চলাচল কিংবা সাধারণ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করা যাবে না। প্রার্থীর ছবি, প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক কোনও বক্তব্যসহ শার্ট, জ্যাকেট বা ফতুয়া ব্যবহার করা যাবে না। মসজিদ, মন্দির গির্জা বা অন্য ধর্মীয় কোনো উপাসনালয়ে কোনও ধরনের প্রচারণা চালানো যাবে না। ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বা কোনো ধরনের তিক্ত (উসকানিমূলক বা মানহানিকর) কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনও বক্তব্য দেওয়া যাবে না। কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগ বা অর্থ ব্যয় করতে পারবে না।
আইনপ্রণেতাদের জন্য নিয়ম
মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতারা প্রচারণা সংক্রান্ত কাজ করার সময় সরকারি যানবাহন ব্যবহার বা অন্যান্য সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে অনুদানও নিতে পারবেন না। ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য সরকার কোনও উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন বা উদ্বোধন করতে পারবে না। এ ছাড়া প্রার্থী কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা সদস্য হয়ে থাকলে নির্বাচনের আগে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সভায় অংশ নিতে পারবেন না। সার্কিট হাউস, সরকারি বাংলো বা অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে দলীয় সভা ও প্রচারণার অনুমতি দেওয়া হবে না।
২০০৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনের আচরণবিধি অনুসারে, সব দলীয় প্রার্থী বা ব্যক্তির একই অধিকার রয়েছে। কেউ অন্য প্রার্থীকে বাধা দিতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ও অনুমোদনের পর সব অনুষ্ঠান করতে হবে।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করার শাস্তি অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড, অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড।
এমএইচএন/পিএইচ