তারেক শামসুর রেহমানের ফ্ল্যাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান

সকাল ১০টা। কাজের বুয়া দরজায় বার বার কড়া নাড়ছেন। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটি গার্ডকে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। পরে কাজের বুয়া ও সিকিউরিটি গার্ডও অনেকবার কড়া নেড়ে কোনো সাড়া না পেয়ে আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকজনকে ডেকে নিয়ে আসেন। আশপাশের লোকজনও কোনো সাড়া না পেয়ে তুরাগ থানা পুলিশকে খবর দেয়।

পরে দুপুর ১২টার পর তুরাগ থানা পুলিশের একটি দল এসে শিক্ষক ও কলামিস্ট ড. তারেক শামসুর রেহমানের ১৩০৪ নম্বর ফ্ল্যাটের দরজায় ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে প্রবেশ করে বাথরুমের দরজার সামনে তার নিথর দেহ দেখতে পায় পুলিশ।

শনিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে উত্তরা-১৮ নাম্বার সেক্টরে রাজউকের আবাসিক প্রকল্পের দোলনচাপা ভবনের ১৩০৪ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে শামসুর রেহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, বাথরুমের দরজার সামনে বমির ওপর পড়েছিল শামসুর রেহমানের মরদেহ। এ সময় তার পা ছিল বাথরুমের ভেতর। বাকি শরীর ছিল দরজার সামনে। তার শরীরে ছিল সাদা রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি ও কালো রঙের প্যান্ট। আর তার ডান পায়ে ছিল মোজা। এছাড়া মরদেহের আশপাশে অনেক রক্তও দেখতে পান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

আরও পড়ুন : নিজ ফ্ল্যাট থেকে ড. তারেক শামসুর রেহমানের মরদেহ উদ্ধার

মাহমুদুর হোসেন রাসেল নামে শামসুর রেহমানের এক প্রতিবেশী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে স্যারের সাড়া না পেয়ে বুয়া আমাদের খবর দেন। আমরা এসে দরজায় অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও স্যারের সাড়া পাইনি। পরে পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে স্যারের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তখন পুলিশের সঙ্গে আমরাও ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে গিয়ে দেখতে পাই, স্যারের মরদেহ বাথরুমের দরজার সামনে বমি ও রক্তের ওপর পড়ে রয়েছে। এছাড়া স্যারের ফ্ল্যাটের সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কোনো ধরনের দৃষ্টিকটু জিনিস আমাদের চোখে পড়েনি।

মাহমুদ হাসান মাসুম নামে আরেক প্রতিবেশী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। আমি স্যারকে একাধিকবার শ্বাসকষ্টজনিত রোগের ওষুধ এনে দিয়েছি উত্তরা থেকে।

এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত শামসুর রেহমানের খালাতো ভাই বদরুল আলম বলেন, তার স্ত্রী ও কন্যা সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি একাই ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। এছাড়া তার আপন ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় আমরা ঠিক করব। তবে আমার জানা মতে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উত্তরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শচীন মল্লিক বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, অধ্যাপক শামসুর রহমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে আমরা সব বিষয়কে সামনে রেখেই তদন্ত করছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ বলা যাবে।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতের মরদেহ তার ফ্ল্যাটের মধ্যেই রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে। আলামত সংগ্রহ শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এমএসি/আরএইচ