বকেয়া বেতন পরিশোধ, রমজান মাসে ইফতারের সময় বিরতি, ঈদ বোনাস, কর্মঘণ্টা কমানো, শ্রমিকদের পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের শ্রমিকরা। এসব দাবিতেই চলমান বিক্ষোভে শনিবার (১৭ এপ্রিল) পুলিশ গুলি চালালে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

শ্রমিকরা জানান, দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ মাসের ১৪ তারিখ তা দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। এছাড়া রমজান মাস হওয়াতে ইফতারের সময় এক ঘণ্টা কর্মবিরতি চাওয়া হয়েছিল। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই পানির সঙ্কট ছিল। এছাড়া ঈদ বোনাসের দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি। এজন্য শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) শ্রমিকরা কাজও বন্ধ রাখেন।  শনিবার (১৭ এপ্রিল) একই দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে পাঁচ শ্রমিক নিহত ও ২১ জন গুরুতর আহত হয়। অপরদিকে তিন পুলিশ আহত হয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাজ্জাদ নামে এক শ্রমিক বলেন, অনেকের দুই তিন মাসের বেতন বাকি ছিল। এছাড়া ইফতারের সময় এক ঘণ্টা বিরতির দাবি ছিল। আমরা বলেছি ইফতারের সময় এক ঘণ্টা বিরতি দিলে পরে এই এক ঘণ্টা কাজ করে দেব। তাতেও কর্তৃপক্ষের সাড়া মেলেনি।

নাজিম নামের এক শ্রমিক বলেন, আমরা রমজানে ইফতারের জন্য এক ঘণ্টার বিরতি চেয়েছিলাম। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতর পানির সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছিলাম।

শাকিল নামের এক শ্রমিক বলেন, নিয়মিত বেতনসহ সামনের ঈদের বোনাস দাবি করেছিলাম। এছাড়া শুক্রবার অর্ধবেলা কাজের দাবি ছিল। কিন্তু কিছুতেই কর্তৃপক্ষের সাড়া মেলেনি।

আবু সৈয়দ নামে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, আমি আন্দোলনে যাইনি। শ্রমিকরা বকেয়া বেতন আর রমজান মাসে ইফতারের সময়ের বিরতি নিয়ে বিক্ষোভ করে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে আমার গায়ে লাগে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, গুলি করে আমাদের মারা হলো। আবার মামলার আসামিও আমাদের করা হয়েছে। এ কেমন বিচার।

তৌহিদ নামে এক শ্রমিক বলেন,  শ্রমিকরা নামাজ ও ইফতারের সময় দাবি করেছিল। এছাড়া বেতনভাতা নিয়মিত পরিশোধের দাবি ছিল। এ নিয়ে শুক্রবার থেকে কাজ বন্ধ রাখে শ্রমিকরা। 

শহিদুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক বলেন, কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। শুক্রবার অর্ধবেলা কাজ করার দাবি জানিয়েছিলাম। এছাড়া ইফতারের সময় এক ঘণ্টার বিরতি চেয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো দাবি মেনে নেয়নি। এছাড়া আমরা ঈদের বোনাস দাবি করছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের দাবি পূরণ করেনি। উল্টো গুলি করেছে। অনেক শ্রমিকের দুই-তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানার জন্য ফোন করলেও এসআলম কর্তৃপক্ষের কেউ ফোন রিসিভ করেননি। 

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও মালিকপক্ষ থেকে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

শনিবার বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেছিলেন, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, শনিবার বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ শ্রমিক নিহত ও ২১ জন আহত হন। বকেয়া বেতন, ইফতারের বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করলে তাতে পুলিশ গুলি চালায়। অবশ্য পুলিশ বলছে, আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। 
 
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ চলছে। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জায়গা অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছিলেন। এস আলম গ্রুপের এ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে একসঙ্গে কাজ করছে চীনের প্রতিষ্ঠান সেপকো ও এইচটিজি।

কেএম/ওএফ