শ্রমিক হত্যাকারী এই সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ। সংগঠনটি বলছে, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত নিরীহ শ্রমিকদের উপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনায় পাঁচ শ্রমিক হত্যা ও শতাধিক শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। শ্রমিক হত্যার দায় সরকার ও মালিককেই নিতে হবে। 

রোববার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব কথা বলা হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘এস আলম গ্রুপের বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থানীয় শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া বেতন-ভাতা, ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, কর্মঘণ্টা ১০ থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা করা, রমজান মাসে ইফতার ও নামাজের জন্য সময় নির্ধারণ, বাথরুমের জন্য পানির ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন।’

তারা বলেন, ‘শ্রমিকরা শুক্রবারেও শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেছেন। শনিবার সকালে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করার কথা বলা হলেও মালিকপক্ষ পুলিশ ডেকে জোরপূর্বক শ্রমিকদের কাজে যোগদানের চাপ দিতে থাকে। শ্রমিকরা কাজে যোগদানে অস্বীকৃতি জানিয়ে দাবি আদায়ে অনড় থাকলে পুলিশ বিনাউস্কানিতে নিরীহ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায়। গণমাধ্যমে ৫ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার সংবাদ আসলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশ ও মালিকপক্ষ অনেক শ্রমিকের লাশ গুম করে ফেলেছে। শ্রমিক আন্দোলন দমনে ও মালিকপক্ষের স্বার্থরক্ষায় সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ এই মর্মান্তিক ঘটনার মাধ্যমে আরও একবার দেশবাসীর সামনে উন্মোচিত হলো।’

তারা আরও বলেন, ‘করোনা মহামারির সময়ে যখন শ্রমিকদের বেতনভাতার সমস্যা সমাধানে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের এগিয়ে আসার কথা, সেই সময় পুলিশ অতীতের ন্যায় মালিকপক্ষের স্বার্থরক্ষায় গুলি করে শ্রমিক হত্যা করেছে। যেমনটা ২০১৬ সালেও পুলিশ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে মালিকপক্ষের পাশে দাড়িয়ে চার গ্রামবাসীকে হত্যা করেছিল। এছাড়া ২০১৭ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে একজনকে হত্যা করা হয়েছিল। অথচ একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি। 

বক্তাদের দাবি, “ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের তাৎক্ষণিক মন্তব্য ‘ঘটনার সঙ্গে স্থানীয়দের ইন্ধন আছে’ ও  ডিআইজির মন্তব্য ‘পুলিশ সবোর্চ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে, নিরুপায় হয়ে গুলি করেছে’ এ থেকেই বুঝা যায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির ফলাফল কি হবে! নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী এই সমাজ ব্যবস্থায় কোনো শ্রমিক হত্যার বিচার আশা করা যায় না।”

সরকার এখন চিনিকল বন্ধের পাঁয়তারা চালাচ্ছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, ‘করোনার সময়ে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের পথে বসিয়েছে। চিনিকল বন্ধের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আর এখন বেতন-ভাতা চাওয়ায় শ্রমিকদের বুকে গুলি চালিয়েছে। শ্রমিকদের বেতন ভাতা নিশ্চিত করতে না পারলেও মালিকদের স্বার্থরক্ষায় সরকার কর্মঘণ্টা সংক্রান্ত শ্রমআইনের ১০০, ১০২, ১০৫ নং ধারা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে। এমনিতেই অধিকাংশ মালিকরা শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করেন। ওভারটাইমে দ্বিগুণ মজুরি পরিশোধ করে না। আবার সরকারের শ্রমআইনের ১০০, ১০২, ১০৫ নং ধারার উপর স্থগিতাদেশের কারণে মালিকদের বেপরোয়া লুণ্ঠন ও শ্রমশোষণের সুযোগ করে দিয়েছে।’

সমাবেশ থেকে বিতর্কিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স বাতিল, আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ, মৃত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ পরিবারকে প্রদান, সব ক্ষেত্রে অবাধ ট্রেড অধিকার নিশ্চিত করা ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান, যুগ্ম-সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর হোসাইন, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান খান, বাংলাদেশ সিএনজি অটো রিক্সাচালক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক শেখ হানিফ, ঢাকা পোশাক প্রস্তুতকারক শ্রমিক সংঘের সভাপতি মাহবুবুল আলম মানিক প্রমুখ।

এমএইচএন/ওএফ