যেকোনো বইয়ের উৎসর্গ পাতাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা লেখক তার সৃষ্টি কারও জন্য নিবেদন করেন এ পাতায়। বদিউল আলম ক্রমেই তার সৃষ্টি সম্ভার দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলছেন। ২০২১ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার একটি অনবদ্য উপন্যাস ‘কবরী’। তিনি উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছেন- করোনা যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া চিকিৎসকদের। সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে লেখক যে এ কাজটি করলেন তার জন্য পাঠক হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে তার প্রতি অভিবাদন রইল।

কবরী উপন্যাসটি চিকিৎসকদের জীবন কাহিনি নিয়ে লেখা হয়েছে। চিকিৎসক বা ডা. বলতে আমরা সমাজের মেধাবী মানুষগুলোকেই বুঝি কিন্তু তাদের জীবনেরও নানা টানাপোড়েন ও অনেক অজানা অধ্যায় থেকে যায়। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কবরী। তার মা আদুরী। কবরীর জন্মের পর থেকেই আদুরী দুঃখ ও দরিদ্রতার কষাঘাতে প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। প্রবল বন্যায় থাকার আশ্রয়টুকু হারিয়ে কলার ভেলায় ভেসে ভেসে আর শাপলা তুলে তা বিক্রি করে বেঁচে থাকার লড়াই করছিল।

ইউএনও দেওয়ান সাহেব বিলের কলার ভেলা থেকে তুলে এনে আদুরী ও কবরীকে আশ্রয় দেন। তার সাহায্য ও সহযোগিতায় আদুরী জেলা প্রশাসকের অফিসে চাকরি পায়। স্বামীহারা আদুরীকে দেওয়ান সাহেব বিয়ে দেন শামসুর সঙ্গে। শামসুও জেলা প্রশাসকের অফিসের কর্মচারী ছিলেন। শামসু ও আদুরীর ঘরেই বড় হয় কবরী।

দেওয়ান সাহেবের ছেলে আজিজের সঙ্গে খেলাধুলায় কাটে কবরীর শৈশব, কৈশোর। এরপর মেধাবী ছাত্র আজিজ ডা. হয়ে অধ্যাপনায় যোগ দেন যে মেডিকেল কলেজে সেই মেডিকেল কলেজের ছাত্রী কবরী। ফলে তাদের সম্পর্ক আরও বেশি গভীর হয়। কবরীর মেডিকেল কলেজের সিনিয়র সাজিদ কবরীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে। এক সময় সাজিদও কবরীর প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে কিন্তু পারিবারিক কারণে তা সম্ভব না। অন্যদিকে কবরীর খালাত ভাই কমল মেধাবী ও বিসিএস ক্যাডার। কমলও কবরীর প্রতি ভালোবাসা বোধ করে। এই ত্রিমুখী ভালোবাসার অন্তস্থল কবরী। 

বদিউল আলম ব্যক্তিগত জীবনে একজন সফল সরকারি প্রশাসক হওয়ায় তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান এ উপন্যাসের বর্ণনায় সুচারুরূপে প্রয়োগ করতে পেরেছেন। চিকিৎসকদের পড়াশোনার নানাদিক ও প্রশাসনিক নানা বিষয় গল্পে গল্পে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। বিশেষ করে কবরীর সিলেট ভ্রমণকে সুনিপুণভাবে বর্ণনা করেছেন যা একজন পাঠককে অবিষ্ট করতে যথেষ্ট।

দুঃখ, দারিদ্রতা, অসুস্থতা, ঋণ ও ভালোবাসার যে মিশ্রনে তিনি এ উপন্যাসকে মলাটবদ্ধ করেছেন। উপন্যাসটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত, যা খুবই দৃষ্টিনন্দন। সাহিত্যদেশ বইটি প্রকাশিত করেছে। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে - ৩৩৫ টাকা।

এসএসএইচ