সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অমর একুশে বইমেলার ১৭১টি নতুন বই এসেছে। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ছিল বইমেলার নবম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর।

অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে ‘ক’ বিভাগে ৩৯৫ জন, ‘খ’ বিভাগে ২৩৫ জন এবং ‘গ’ বিভাগে ৬৫ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন অধ্যাপক নিসার হোসেন।

এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ‘ক’ বিভাগে ১২৩ জন, ‘খ’ বিভাগে ১৩৮ জন এবং ‘গ’ বিভাগে ৫১ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। 
প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন বাচিকশিল্পী আনজুমান আরা, মো. গোলাম সারোয়ার এবং রফিকুল ইসলাম।

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : এস. ওয়াজেদ আলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবু হেনা মোস্তফা এনাম। আলোচনায় অংশ নেন করেন ইকতিয়ার চৌধুরী এবং কুদরত-ই-হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম
হোসেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রাবন্ধিক বলেন, এস. ওয়াজেদ আলির রচনাসমগ্র কালের স্কুল ও নির্মম মুখোশমালা খুলে দেওয়া এবং সর্বমানবের মাঙ্গলিক সমাজ নির্মাণের ইশতিহার। স্নায়ু ও মজ্জার ভেতর আশ্চর্য বরাভয় নিয়ে তিনি লিখেছেন সমাজ-রাষ্ট্র-জীবন ও শিল্পসন্ধানী মানবমুক্তির দুঃসাহসিক রচনাসমূহ। এস. ওয়াজেদ আলির রক্ত ও মজ্জায় গেঁথে ছিল স্বাদেশিকতা, জাতিত্ববোধ ও মানবসম্পর্কের ঔদার্য। এমনকি তাঁর সাহিত্য ও নন্দনচিন্তার সাঁকো গড়ে উঠেছে মানুষের মাঙ্গলিক সম্মিলনের আকাঙ্ক্ষায়। কালের ক্ষত, রক্তের দাগ এবং অগ্নিদগ্ধ ছাই পেরিয়ে যে অখণ্ড রাষ্ট্রের স্বপ্ন তিনি দেখেছেন, স্বভাবতই সেখানে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের সম্মিলন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

আলোচকরা বলেন, স্বচ্ছল ও অভিজাত বাঙালি মুসলমান পরিবারের সন্তান এস. ওয়াজেদ আলি ইউরোপীয় আধুনিক চিন্তা-চেতনার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। ধর্মীয় সংস্কৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। ধর্মচর্চার ব্যাপারে এস. ওয়াজেদ আলি ছিলেন যুক্তিবাদী, আধুনিক ও উদার দৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি ছিলেন তার সময়ের চাইতে অনেক অগ্রসর।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, এস. ওয়াজেদ আলি ছিলেন সব্যসাচী লেখক এবং একজন মহান চিন্তক। আন্তঃসাংস্কৃতিক মিলনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। তার আদর্শ ও চিন্তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য আমাদের যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।

আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শিশুসাহিত্যিক রিফাত নিগার শাপলা, গবেষক অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান, কবি মাশরুরা লাকী ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন বাদল।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি হারিসুল হক, বায়তুল্লাহ কাদেরী ও আফরোজা সোমা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আজহারুল হক আজাদ, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সুকান্ত গুপ্ত ও তামান্না সারোয়ার নীপা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুথি পাঠ করেন আবুল বাশার তালুকদার।

আগামীকালের বইমেলার সময়সূচি

শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার দশম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় ও চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। আর অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে আগামীকাল সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সুচিত্রা মিত্র’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আহমেদ শাকিল হাসমী ও অণিমা রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মফিদুল হক।

আরএইচটি/কেএ