দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া সে অঞ্চলের পানিতে লবণাক্ততার হার বাড়ছে। 

বুধবার (২১ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়ে পানির সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের কাছে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।

সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে সাধারণত বৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড়, এমনকি শিলাবৃষ্টির আগমনের মধ্যদিয়ে নতুন বাংলা বর্ষ শুরু হয়। কিন্তু এরইমধ্যে বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ এর দ্বিতীয় সপ্তাহ চললেও দেশের অধিকাংশ জায়গায় খুব কমই বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমনকি অনেক জায়গায় এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, পানির ঘাটতি ও খাবার পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে উপকূল অঞ্চলের জেলাগুলোতে পানিতে লবণাক্ততার হার বেড়ে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা ও বরগুনার মতো বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জেলাগুলো মারাত্মক পানির সংকটে পড়েছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে পুকুরের মতো মিঠাপানির উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে এবং টিউবওয়েলেও পানি দিন দিন কমে আসছে বলে জানায় সংস্থাটি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাকশনএইড জানায়, দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, ইউরিন্যাল ইনফেকশান, চর্মরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, যৌনাঙ্গে চুলকানি ও ঘা এর মতো রোগ বেড়েছে। নারীদের মধ্যে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিচ্ছে, যা পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন টিউমার এবং জরায়ু ক্যান্সারে রূপান্তরিত হচ্ছে।

মার্চ-এপ্রিল মাসে পানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়ন-ভাড়াশিমলা ও মথুরেশপুর এবং বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের দিকে তাকালে দেখা যায়, কম বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানকার পুকুরের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।

সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন পুকুরে দেখা দিয়েছে ব্যাঙাচির আধিক্য। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এই অঞ্চলের দশটির বেশি গ্রামের ছয় শতাধিক পরিবারের মানুষ এই উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে থাকেন। এ ব্যাপারে নারায়ণপুর গ্রামের রহিমা খাতুন বলেন পানির আর কোনো উৎস না থাকায় তারা এ পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করছেন।

এসব অঞ্চলে পানি সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রধানত নারীরা করে থাকেন। যখন পানির অভাব দেখা দেয়, তখন তারা এই দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। ফলে নারী ও মেয়েদের ভোগান্তি বাড়ছে যা পানির ঘাটতি ও সংকটের ‘নারীবাদিতা’র দিকে ধাবিত করছে বলে মনে করছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। এটি বলছে, অপরিষ্কার ও দূষিত পানির ব্যবহারের কারণে অনেক নারী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর কর্তব্যরত ডাক্তার মাহাতাব হোসেন জানান, ইদানিং অনেক নারী ইউরিন্যাল ইনফেকশান, যৌনাঙ্গে চুলকানি এবং সাদাস্রাবের (লিউকোরিয়া) মতো অসুখ নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন।

সাতক্ষীরার এক নারী জানান, বাজারে পানির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অধিকন্তু করোনা মহামারির কারণে তাদের আয় কমে যাওয়ায় বাজার থেকে পানি কিনে আনার সক্ষমতা নেই। তাই তারা দূষিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। সুতরাং এটি নারীদের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় সমস্যার উদ্রেক করেছে।

এ বিষয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, এই সংকট মোকাবেলায় অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ প্রাথমিক পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে জনগণকে পানি সরবরাহ করছে। মাঝারি পর্যায়ে আমরা ভবিষ্যৎ জলবায়ুর গতিবিধি বিবেচনা করে পানি সংকট নিরসনে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন টেকসই সমাধানগুলো খুঁজে পেতে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কাজ করছি। তবে এর একটি স্থায়ী সমাধান দরকার। এই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সরকার ও সব উন্নয়ন সংস্থার একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেনের আমন্ত্রণে বিশ্ব নেতারা ২২ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ভার্চুয়াল জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যারা তীব্র পানি সংকটে রয়েছেন, তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলতে চাই, জলবায়ু রক্ষার পদক্ষেপ যেন কেবল গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। এটি ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা নয়, এর জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। তাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে যুক্তিযুক্তভাবে কাজ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পান।

একে/আরএইচ