ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউ
আগুনের সূত্রপাত হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থেকে
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত আইসিইউ ইউনিট
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় করোনা রেগীদের আইসিইউতে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা। অতিরিক্ত চাপে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সেখানকার ১২ নম্বর বেডে লাগানো হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ওই আগুনে প্রায় দুই কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। আগুনে কারও মৃত্যু নাহলেও আইসিইউ থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের পর মারা যান তিন করোনা রোগী।
আইসিইউতে অগ্নিকাণ্ডের পর পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি হয়। দুটি কমিটির সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। আগুন লাগার পর নির্বাপণের ক্ষেত্রে দেরি হওয়ার কারণ খুঁজে পেয়েছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি।
বিজ্ঞাপন
গত ১৭ মার্চ সকালে ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় করোনা ইউনিটের আইসিইউতে আগুন লাগে। ১৪ বেডের ওই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার তিন রোগীর মৃত্যু হয়। অবশ্য তাদের কারও মৃত্যু আগুনে হয়নি বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস। অধিদফতরের উপ-পরিচালক (অ্যাম্বুলেন্স) নূর হাসানকে প্রধান করে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
একই ঘটনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এবং ঢামেক কর্তৃপক্ষ ৯ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি সবার আগে প্রতিবেদন দাখিল করে। তাদের প্রতিবেদনে আগুনের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ত্রটিপূর্ণ হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার বিষয়টি।
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক (অ্যাম্বুলেন্স) নূর হাসান আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘১৫ কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। কমিটি যথা সময়েই প্রতিবেদন দাখিল করে। আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে আগুনের কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা। সেখানে অতিরিক্ত চাপে আগুন ধরে গিয়েছিল। আর উপরে সিলিংয়ের কারণে প্রচণ্ড ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। যা আবার নির্গমনের পথ ছিল অল্প। যে কারণে আগুন নির্বাপণেও বেগ পেতে হয়। ধোঁয়া নির্গমন করার পর আগুন নির্বাপণ করতে হয়েছে।’
এদিকে গত সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ঢামেক হাসপাতালের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি। তাদের প্রতিবেদনেও উঠে আসে ক্রটিপূর্ণ হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থেকে আগুনের সূত্রপাতের বিষয়টি।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ ও হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাড়াহুড়োর মধ্যে চালু হয়েছিল এ আইসিইউ ইউনিট। বিশেষ প্রয়োজনে চালু করার পর ২৪ ঘণ্টা এ আইসিইউর প্রেশার (চাপ) সামলাতে হয়। প্রচুর রোগীর চাপ ছিল। চাপের কারণে আইসিইউ বেড মেইনটেইন্যান্স ঠিকমতো হয়নি। আইসিইউ ২৪ ঘণ্টা চালানোর জন্য যে ধরনের সক্ষমতা, স্ট্যাবিলিটি, পারফরম্যান্স দরকার সেটাও আমরা পারিনি। অতিরিক্ত চাপের মধ্যেই ১২নং বেডের হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলায় ত্রুটি দেখা দেয়। আর সেখান থেকেই আগুন ধরে উপরে উঠে যায়।’
তিনি বলেন, ‘হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দেশে খুব অল্প সময় ধরে ব্যবহার হচ্ছে। একটা দুর্ঘটনার পর সবাই সতর্ক হয়। হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থেকে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। কারণ এতে থাকা অক্সিজেন উচ্চমাত্রায় দাহ্য বলে সামান্য কোনো সুযোগ পেলেই এতে আগুন ধরে যায়। ওইদিন দুর্ঘটনাবশত গরম হয়ে আগুন ধরে গিয়েছিল। এটেন্ডেন্ট আগুন নেভাতে পারেনি, উল্টো আরও বেড়ে যায়।’
প্রতিবেদনে ঢামেক হাসপাতালের তদন্ত কমিটি কিছু সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, উন্নত মান নিশ্চিত করে নতুন করে আইসিইউ তৈরি করা। সেখানে ফায়ার নির্দেশনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা। হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও অগ্নিনির্বাপণ ইক্যুইপমেন্ট ব্যবহারে কর্মকর্তা-কর্মচারী, নার্স ও চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
১৪ বেডের ক্ষতিগ্রস্ত আইসিইউ ফের চালু হবে ১২ বেডে
ক্ষতিগ্রস্ত করোনার আইসিইউ ইউনিটটি নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হচ্ছে। তবে এবার ১৪ বেড নয়, ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা ও রিকোয়ারমেন্ট মেনে ১২ বেডে চালু করা হচ্ছে। জিরো অগ্নিঝুঁকি সম্পন্ন মান নিশ্চিত করেই তা চালু করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সম্পর্কে ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘মূলত, আমরা যে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছি সেটাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের কমিটি জানতে চেয়েছিল আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। আমরা সেটা মন্ত্রণালয়ের কমিটিকে জানিয়েছি।’
জেইউ/এফআর/জেএস