ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে সোমালিয়ায় আরেক গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নাবিকরা সুস্থ আছেন, তাদের ওপর নির্যাতন করেনি সোমালিয়ার জলদস্যুরা। তবে ছিনতাই হওয়া জাহাজের পিছু নেওয়া ইইউ নেভির জাহাজের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নাবিকরা। ওই জাহাজের কারণে নাবিকদের ‘সমস্যা’ হবে বলে হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর দুইটার দিকে এক বন্দি নাবিক তার পরিবারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

নাবিক পরিবারের সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দুপুর দুইটার দিকে তার (নাবিক) সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তাদের জলদস্যুরা আরেকটি গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেছে। ওই গ্রুপ জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’

‘এখনও ইইউ নেভির জাহাজটি ফলোআপে আছে। জলদস্যুরা বলছে, নেভির জাহাজ থাকলে নাবিকরা সমস্যায় পড়তে পারে। সবশেষে তিনি আমাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।’

যদিও মুক্তিপণ বা অন্য কী উপায়ে নাবিকদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে— এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা যোগাযোগ করেনি জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে। জানায়নি তাদের দাবি-দাওয়াও। তবে জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে জাহাজটির বিমাকারী যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে জাহাজের মালিকপক্ষ। এতে কতদিন সময় লাগতে পারে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না তারা।

প্রসঙ্গত, ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে উদ্ধার করতে বুধবার রাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিজস্ব নেভির একটি জাহাজ তাদের পিছু নিয়েছে বলে জানা গেছে। জলদস্যু ও ইইউর জাহাজে থাকা নৌসেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময়ও হয়। একপর্যায়ে জিম্মি বাংলাদেশিদের হত্যার হুমকি দেয় জলদস্যুরা। এরপর কোনো উপায় না থাকায় পিছু হটে ইইউ নেভির জাহাজটি।

সোমালিয়ার স্থানীয় সময় বুধবার (১৩ মার্চ) রাত থেকে এখন পর্যন্ত ইইউ নেভির জাহাজটি তাদের অনুসরণ করে যাচ্ছে। কিন্তু জলদস্যুদের অনড় অবস্থানের কারণে জিম্মি থাকা ২৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ২০ নটিক্যাল মাইল দূর থেকে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজকে অনুসরণ করে যাচ্ছে ইইউর জাহাজটি। ইতোমধ্যে সোমালিয়া জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত জলসীমান্তে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশি জাহাজটি।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সকালে এক বন্দি নাবিকের পাঠানো মেসেজ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ওই মেসেজটি ঢাকা পোস্টের হাতে আছে।

যদিও পিছু নেওয়া জাহাজটি কোন দেশের তা নিশ্চিত হতে পারেননি জিম্মি ওই নাবিক। তবে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ওই জাহাজটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেভির।

কেএসআরএমের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জলদস্যুদের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জাহাজের নাবিকেরা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জলদস্যুরা নাবিকদের কোনো ক্ষতি করেনি। তাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জলদস্যুদের মুক্তিপণ দাবির বিষয়টিকে ‘গুজব’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো দাবি-দাওয়া জানায়নি জলদস্যুরা। হয়তো জাহাজটিকে তাদের সেফ জোনে নেওয়ার পর তখন তারা তাদের দাবির বিষয়টি বলতে পারে।’

মিজান বলেন, ‘এর আগে ২০১০ সালে আমাদের মালিকের আরো একটি জাহাজ একই জলদস্যু বাহিনীর কবলে পড়েছিল। সেসময় ১০০ দিন পর জাহাজসহ সব নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও সব নাবিকদের সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে আনতে পারব বলে আশা করছি।’

এসএম