করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা
চলমান করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে মানুষের আয় কমেছে। আবার খাদ্যদ্রব্যের দামও বেড়েছে। এ অবস্থায় মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) পরিবেশ বাঁচাও (পবা) আন্দোলন বারসিক ও কাপের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘করোনায় নগরের নিম্ন আয়ের নাগরিকদের খাদ্য সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক এক অনলাইন সভায় এ কথা বলেন বক্তারা।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা সুদীপ্তা কর্মকার। তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত। বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের এমনকি মধ্যবিত্তরাও খাদ্য ব্যয় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ঢাকা শহরের ৪০ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষ দীর্ঘ লকডাউনে চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। এ মানুষদের আয় নেই, নেই বেঁচে থাকার অবলম্বন। এ শ্রেণির মানুষকে রক্ষায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বক্তারা বলেন, সরকারের উচিত অবিলম্বে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের নামের তালিকা তৈরি করা। এক্ষেত্রে নগরের নিম্ন আয় ও ভাসমান মানুষের তালিকায় আগে হাত দিতে হবে। কারণ গ্রামের অতিদরিদ্রদেরও নানামাত্রিক সুযোগ রয়েছে কিন্তু নগরের ভাসমান মানুষের তো নাগরিকের মর্যাদাই দেওয়া হয় না। লকডাউনে অধিকাংশ মানুষের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। কিন্তু এগুলো দেখার কেউ নেই।
বিজ্ঞাপন
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এবং পিপিআরসির নতুন গবেষণায় জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে একদিকে যেমন মানুষের আয় কমেছে অন্য দিকে খাদ্যসহ অন্যান্য দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে, যা মানুষের খাদ্য অধিকার এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছে। ৩৭ শতাংশ মানুষ এখন বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছে। ৬৩ শতাংশ মানুষ ঘর ভাড়া দিতে পারেনি। ৪৭ শতাংশ মানুষ তাদের খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়েছে।
খাদ্য অধিকার আন্দোলনের তথ্য মতে, দেশের প্রায় ৬৬ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিনমজুর, শ্রমিক, কর্মচারী, কারিগর, রিকশাচালক, গৃহকর্মী, হকারসহ নিম্ন আয়ের নগরবাসী। যারা প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে শহরকে সক্রিয় রেখেছে।
খাদ্য নিরাপত্তাকে নগরের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নগরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে স্থানীয় কউন্সিলর, সরকারের প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজ, এনজিও প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডের দরিদ্র মানুষদের একটি তালিকা তৈরি করা; ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে নগরের দরিদ্র মানুষদের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে একটি করে ফুডব্যাংক তৈরি করতে হবে। সিটি করপোরেশন, কাউন্সিলর এবং এনজিওর সমন্বয়ে নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সরকারি সহায়তা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়াসহ আটটি সুপারিশ উত্থাপন করা হয়।
আলোচনায় যুক্ত ছিলেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, কাপের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান ইয়াত, কাপের সহসভাপতি কাজী বেবি, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট এম এ হামিদ খান, বাংলাদেশ আওয়ামী বাস্তুহারা লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হালদার প্রমুখ।
এমএইচএন/এসকেডি