রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র এখন হাতিরঝিল। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ঘুরতে আসেন এখানে। কিন্তু আশপাশের বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা ও ড্রেনের ময়লা পানি পড়ে দূষিত করছে হতিরঝিলের পরিবেশ। ময়লা আবর্জনা ঝিলের পানিতে মিশে উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে।

জানা গেছে, ড্রেন দিয়ে আশপাশের এলাকার আবর্জনা হাতিরঝিলে পড়ে নষ্ট করছে পানির মান। অন্যদিকে এ পানি অনেক দিন ঝিলে আটকে থাকায় ক্রমেই ধূসর রঙ ধারণ করছে। দূষিত ও নোংরা পানি থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আশপাশের বাসিন্দা ও ওয়াটার ট্যাক্সিযোগে যাতায়াতকারীদের। হাতিরঝিলে পানি নামার ৯টি পথে বর্জ্যশোধনের যন্ত্র বসানো হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব যন্ত্র এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া পানির চাপ বেশি থাকলে এ যন্ত্রগুলো কাজ করে না। তাই দূষিত ময়লা আবর্জনা ঝিলে পড়ে পরিবেশ দূষণ করছে।

আরও পড়ুন : হাতিরঝিল পাড়ে শহুরে ফসলি ক্ষেত

এফডিসি ঘাট থেকে ওয়াটার ট্যাক্সিযোগে গুদারাঘাট এসে নেমেছেন হাসিবুর রহমান নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে হাতিরঝিলের পানি তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আজ যখন ওয়াটার ট্যাক্সি করে আসছিলাম তখন বোটের ইঞ্জিন চলায় এই দুর্গন্ধ আরও তীব্র হচ্ছিল। যে কারণে বমি চলে আসছিল যাত্রীদের। এত দুর্গন্ধ হলে রোজা রেখে কেউ ওয়াটার ট্যাক্সিযোগে চলাচল করতে পারবে না।

হাতিরঝিলের লেকপাড়ের রাস্তা ধরে সামনের দিকে ফুটপাতে বসার একটি স্থান রয়েছে। সেখানে অনেকেই গাছের ছায়ায় বসেছিলেন। এদের মধ্যে একজন স্বপন আহমেদ।

তিনি বলেন, কয়েক দিন আগেও হাতিরঝিলের পানিতে এত দুর্গন্ধ ছিল না। পানির রঙ নষ্ট হয়ে গেছে। আশেপাশের সব বাসাবাড়িসহ অস্থায়ী দোকানগুলোর আবর্জনা নিয়মিত ফেলা হচ্ছে হাতিরঝিলের পানিতে। ফলে এই দুর্গন্ধ আরও বাড়ছে। এখন এই ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ও নাক বন্ধ রাখতে হয়।

হাতিরঝিল ঘুরে দেখা গেছে, পানির প্রবাহ না থাকায় ঝিলে থাকা ময়লা আবর্জনা একস্থানে আটকা পড়েছে। ক্রমেই ঝিলের পানি কালো, সবুজ ও ধূসর রঙ ধারণ করছে। সবুজ আবরণ পড়েছে পানির ওপর। যা থেকে তৈরি হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ।

আরও পড়ুন : জুন থেকে পরিষ্কার হবে হাতিরঝিলের পানি

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিলের পানি শোধন করে দুর্গন্ধমুক্ত করতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার ওই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এরপর নানা জটিলতায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় একাধিকবার। তবে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পানির এ দুর্গন্ধ আর থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, হাতিরঝিলের পানি শোধন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আশা করছি, আগামী জুনের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর থেকে হাতিরঝিলের পানিতে দুর্গন্ধ থাকবে না।

এদিকে গত রোববার ( ২৫ এপ্রিল) এক আলোচনা সভায় ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মগবাজারের মধুবাগ, নয়াটোলা, মহানগর আবাসিক এলাকা, নিকেতন, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, নাখালপাড়া, কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডি-২৭, গ্রীন রোড, কাঁঠাল বাগানসহ বিভিন্ন এলাকার বর্জ্য হাতিরঝিলে পড়ে। রাজউকের বর্তমান ব্যবস্থাপনায় হাতিরঝিল লেকে কঠিন বর্জ্য ঢুকতে না পারলেও তরল বর্জ্য ঢুকছে। হাতিরঝিলকে রক্ষা করতে হলে কঠিন কিংবা তরল কোনো ধরনের বর্জ্যই সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।

এএসএস/এসকেডি/জেএস